ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রাতের আঁধারে উজাড় হচ্ছে শালবন
প্রকাশ: সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪, ১:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৪৮৬)
নওগাঁর ধামইরহাটে উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার উত্তরে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ আলতাদীঘির পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণে রয়েছে প্রাকৃতিক শালবন। বনের উত্তরে তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা ভারতীয় সীমান্ত। এখন এই অঞ্চলটি আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিতি পেয়েছে।

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের স্থানীয় বাসিন্দারাসহ পর্যটকদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং বন বিভাগের অসাধু কিছু অফিসার ও কর্মচারীর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে শালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে উজাড় করে ফেলছে প্রাকৃতিক বনটি।

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিন আলতাদীঘির পশ্চিম পারসহ বনের ভেতরের বিভিন্ন অংশে শতাধিক শাল, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের গোড়া ও অংশবিশেষ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কে বা কারা এসব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এতে করে বনের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে ২০১৪-১৫ সালে অপরিকল্পিতভাবে কয়েক লাখ বেতগাছ রোপণ করা হয়। এসব বেতগাছের জঙ্গলে শালগাছের বংশবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্যও।

অন্যদিকে দফায় দফায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আলতাদীঘির পশ্চিম ও দক্ষিণ পারসহ বনের ভেতরে বিভিন্ন অংশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বারবার আগুন লাগা কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা-এ নিয়ে সন্দেহের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে স্থানীয়দের বক্তব্যে। তবে এ বিষয়ে তারা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বন বিট অফিসার আনিসুর রহমান জানান, মাদকসেবীদের ফেলে দেওয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। আলতাদীঘি পুনঃখনন ও দীঘিরপাড় সংস্কারের জন্য ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ২০০৭-০৮ সালে বনায়নের আওতায় ১৫টি লটের মধ্য দিয়ে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ টাকায় দীঘির দুই পাড়ঘেঁষে বেড়ে ওঠা ৪৪৬টি আকাশমনি ও ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। 

বন কর্তৃপক্ষ সময়ের আলোকে জানায়, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বনঘেঁষে দীঘির পাশ দিয়ে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস, পর্যটকদের সুবিধার্থে রেস্টহাউস, পিকনিক কর্নার, পার্ক, টয়লেটসহ বেশ কিছু স্থাপনা। সেসব তৈরির কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দীঘির দক্ষিণ পারে তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৭০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ৬৪৯ দশমিক ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বন অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘আলতাদীঘি পুনর্খননের মধ্য দিয়ে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’ প্রকল্পে দীঘিটি খনন করা হয়েছে। তবে এরপর দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলহীন বিশাল গর্ত হয়ে পড়ে আছে আলতাদীঘি। এ কারণে শীত মৌসুমেও দেখা মেলেনি অতিথি পাখিদের। এতে করে পর্যটকবিমুখ হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমন করে দীঘির সৌন্দর্য পুরোটাই বিলুপ্ত হওয়ার কারণে সম্ভবনাময় এই পর্যটন শিল্পটিও হুমকির মুখে পড়েছে। 

অথচ কয়েক বছর আগে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন আলতাদীঘির স্বচ্ছ পানিতে ফুটে থাকা হাজারো পদ্মফুলের ডালে ও পাতায় অতিথি পাখিরা দাপিয়ে বেড়াত। শীতের সময় ডাহুক, বালি হাঁস, পানকৌড়ির কলকাকলি আর তাদের চঞ্চল ওড়াউড়িতে মুগ্ধ হতো নানা বয়সের মানুষের হৃদয়। ভ্রমণপিপাসুরা মুগ্ধ হয়ে পরিবার নিয়ে ঘরে ফিরত। 

ধামইরহাট বন বিট সূত্রে জানা গেছে, পাইকবান্দা রেঞ্জের ধামইরহাট বিটে অবস্থিত আলতাদীঘি শালবন। উপজেলার ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে দীঘিটি অন্যতম। শালবনসহ ৬৫২ দশমিক ৩৭ একরের মধ্যে মূল দীঘিটির আয়তন প্রায় ৪৩ একর। ধারণা করা হয় পাল আমলে প্রজা সাধারণের পানির চাহিদা মেটাতে রানীর নির্দেশে আলতাদীঘি খনন করা হয়েছিল। দেশের প্রাচীন দীঘিগুলোর মধ্যে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ ও সচল দীঘি। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শালবনসহ আলতাদীঘিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close