ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মানুষের সেবায় নিয়োজিত ফেরেশতা
প্রকাশ: রবিবার, ২ জুন, ২০২৪, ৪:১৭ এএম  (ভিজিট : ৬০৬)
সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্যা সৃষ্টি বিরাজমান। এর মধ্যে বিশেষভাবে তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তিনটি জাতিকে-১. ফেরেশতা। ২. জিন। ৩. মানুষ। এই তিন সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে ঘোষণা করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন ফেরেশতাদের। ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার পবিত্র এক সৃষ্টির নাম। নূর থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা আল্লাহর বিশেষ দূত ও বাহিনী। ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়ন জরুরি। কেউ যদি ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান না আনে তা হলে সে মুমিন থাকে না।

মৌলিকভাবে তাদের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হলো-১. তাদের অস্তিত্ব বিদ্যমান এই বিশ্বাস রাখা ও এর স্বীকৃতি প্রদান করা। ২. আল্লাহর কাছে তাদের বিশেষ মর্যাদা ও নৈকট্য রয়েছে এই বিশ্বাস রাখা ও এর স্বীকৃতি দেওয়া। ৩. তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা, শত্রুতা না রাখা। ৪. ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমের অনুগত, তারা নিজের পক্ষ হতে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না এবং তারা আল্লাহর প্রতিটি আদেশ বাস্তবায়নকারী। ৫. তারা পুরুষ বা নারী নন, এমনকি তারা পানাহার, বৈবাহিক ও জৈবিক চাহিদা থেকে পুরোপুরি মুক্ত ও নিষ্পাপ। ফেরেশতারা যেহেতু আল্লাহর বিশেষ বাহিনী ও দূত, তাই নানা কাজে আল্লাহ তাদের নিয়োজিত করে রেখেছেন। নিয়োজিত করে রেখেছেন মানবসেবাসহ অসংখ্য কাজে। কুরআন ও হাদিসে তাদের কিছু কর্মবিন্যাসের বিবরণ পাওয়া যায়।

মানুষের উদ্দেশ্যে বার্তাবহন : আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় নবী-রাসুলগণের কাছে ওহি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন জিবরাঈল (আ.)-কে । তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীগণের কাছে নানা ওহি নিয়ে আগমন করতেন। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি জিবরাঈলের শত্রু হয়, তবে সে তো আল্লাহর অনুমতিক্রমেই এ কালাম তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছে’ (সুরা বাকারা : ৯৭)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় এ কুরআন রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। বিশ^স্ত ফেরেশতা (জিবরাঈল) তা নিয়ে অবতরণ করেছে।’ (সুরা শুআরা : ১৯২-৯৩)

বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদন : এ কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন হজরত মিকাঈল (আ.)। তিনি আল্লাহর আদেশে বাতাসের মাধ্যমে মেঘমালা সঞ্চালন করেন এবং আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে তা বর্ষণ করেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) জিবরাঈল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মিকাঈল কোন দায়িত্বে নিয়োজিত? তখন জিবরাঈল বলেন, তিনি বৃষ্টি, উদ্ভিদবিষয়ক দায়িত্বে রয়েছেন।’ (ফাতহুল বারি : ৬/৩৫৫)

কেয়ামতের সময় শিঙায় ফুঁৎকার : পৃথিবীর বয়সসীমা একদিন ফুরিয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে মানবসভ্যতার কাল। কেয়ামত সংঘটিত হবে। কেয়ামতের সেই মহাপ্রলয় শুরু হবে ইসরাফিল (আ.)-এর  ফুঁৎকারের মাধ্যমেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘শিঙায় ফুঁৎকার দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা প্রথম দিন থেকেই শিঙা নিয়ে তটস্থ হয়ে আছেন। ভীতসন্ত্রন্ত অবস্থায় আরশের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। কখন তাকে আদেশ দেওয়া হবে। আদেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এমনভাবে তাকিয়ে আছেন, তার চোখ দুটো যেন দুটো ঘূর্ণায়মান নক্ষত্র গোলক।’ (মুসতাদরাকে  হাকেম : ৮৬৭৬)

প্রাণিকুলের রুহ কবজ : প্রতিটি প্রাণীর রুহ কবজ করার জন্য আল্লাহ দায়িত্ব প্রদান করেন মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে। আল্লাহর আদেশে তিনিই প্রতিটি প্রাণীর প্রাণ হরণ করেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়, ‘বলে দাও, মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে (মালাকুল মাউত) তোমাদের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে, সে তোমাদের পুরোপুরি উসুল করে নেবে। তারপর তোমাদেরকে রবের কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সুরা সাজদা : ১১)
মানুষের রক্ষণাবেক্ষণ : মহান আল্লাহ প্রত্যেক বান্দার হেফাজতে কিছু ফেরেশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন। তারা আল্লাহর হুকুমে তাঁরই মর্জিমতো মানুষকে নানা বিপদাপদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ তারা বান্দার প্রহরী হয়ে কাজ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেকের সামনে-পেছনে এমন প্রহরী (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, যারা আল্লাহর নির্দেশে পালাক্রমে তার হেফাজত করে।’ (সুরা রাদ : ১১)।

আমলনামা লিপিবদ্ধকরণ : আল্লাহ মানুষের আমলনামা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত। কেয়ামতের দিন যেন বান্দা আপন কর্মকে অস্বীকার না করতে পারে এর প্রমাণ হিসেবে দুই ফেরেশতার মাধ্যমে বান্দার প্রতিটি আমল লিপিবদ্ধ করেন। সর্বদা ডান ও বাম পাশে তারা উপস্থিত থেকে বান্দার ভালো-মন্দের কাজ লিপিবদ্ধ করেন। বর্ণিত হয়েছে ‘কর্ম লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাদ্বয় লিপিবদ্ধ করে একজন ডান দিকে এবং একজন বাম দিকে বসা থাকেন। মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে লেখার জন্য সদা প্রস্তুত।’ (সুরা কাফ : ১৭-১৮)

শুক্র-বিন্দুকে জরায়ুতে সংরক্ষণ : শুক্র-বিন্দু হলো মানবজন্মের প্রধান উপকরণ। আল্লাহ তায়ালা আপন কুদরতে মায়ের জরায়ুতে তাকে সংরক্ষণ করেন। বিশেষ সময়ে সেই শুক্রাণু যখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়, কিছু আদেশ দিয়ে আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা পাঠান। রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাটবাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ওইভাবে ৪০ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। তাকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয় তার ‘আমল, তার রিজিক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। (বুখারি : ৩২০৮)।

পাহাড়ের জন্য নিয়োজিত : জমিনের ভারসাম্য বজায় রেখেছে পাহাড়গুলো। পাহাড়ের স্থিতি ও ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আল্লাহ পৃথক ফেরেশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে এর প্রমাণ মেলে। দ্বীনের দাওয়াত সংক্রান্ত বিশেষ এক ঘটনা বর্ণনাকালে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন।’ (বুখারি : ৩২৩১)
বিশেষ ইবাদতে নিয়োজিত : ফেরেশতারা সদা আল্লাহর হুকুমের অনুগত। তবু আল্লাহ কোনো কোনো 

ফেরেশতাকে বিশেষ কোনো ইবাদতে নিয়োজিত করে রেখেছেন। বিষয়টি নিচের হাদিস থেকে জানা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি (অদৃশ্য জগতের) যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোনো ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার জন্য অবনত মস্তকে সেজদায় পড়ে না আছে।’ (তিরমিজি : ২৩১২)

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close