চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলাতে ফাঁদে ফেলে ব্যবসায়ীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে টাকা দাবি করায় ৪ নারী-পুরুষ গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। শনিবার (১ জুন) সকালে উপজেলার শিকলবাহা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এরআগে, শুক্রবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নারীকে দিয়ে কৌশলী ফাঁদ ফেলে টাঙ্গাইলের এক জুট ব্যবসায়ীকে বাসায় ডেকে এনে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে লাখ টাকা দাবির অভিযোগে কর্ণফুলী থেকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত চার আসামিরা হলেন- কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এস আলম গলির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ হোসেন এর স্ত্রী পারভীন আক্তার ববি (৩৪), শিকলবাহা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিরার বাড়ীর মো. ওসমান গণির ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সানি (২৪), শিকলবাহা ৩ নম্বর ওয়ার্ড আমশাপাড়ার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ জসিম প্রকাশ আব্দুল কাদের প্রকাশ আদিল (২৭) ও শিকলবাহা বিল্লা পাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. ইমরান (২৭)। এদের মধ্যে পারভীনের নিজ বাড়ি নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাতেই কর্ণফুলী থানায় বিস্তারিত জানিয়ে ‘জিম্মি করে মারধর ও বলপূর্বক সম্পত্তি ছিনিয়ে নেবার অপরাধে’ ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম পেশায় একজন জুট ব্যবসায়ী। আসামি পারভীন আক্তার ববির সাথে এক বছর আগে তার মুঠোফোনে পরিচয়। সেই সুবাদে ববি বিভিন্ন সময় আমিনুলকে ফোন করে নানা সমস্যার কথা জানিয়ে সাহায্য সহযোগিতা চাইতেন। আমিনুলও সরল বিশ্বাসে সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন।
গতকাল (শুক্রবার) দুপুর ২টার সময় ববি ফোন করে বলে তার ছেলে খুব অসুস্থ কিছু টাকা পাঠাতে। আমিনুল ব্যবসার কাজে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম আসার পথে কুমিল্লা থেকে ৫০০ টাকা বিকাশ করেন। তার কিছুক্ষণ পরে আবারো ফোন করে বলেন, বাসায় এসে তাকে এবং তার ছেলেকে দেখে যেতে।
এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রাম এসে আমিনুল ব্যবসায়ীক কাজ শেষে ববির কথামতো রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় যান। এর আগে ববি মইজ্যারটেক হতে তাকে রিসিভ করেন। বাসায় গিয়ে দেখেন ববির কোন ছেলে নেই। সে একা। তার ১০ মিনিট পর হঠাৎ সানি, আদিল ও ইমরান এসে আমিনুলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এমনকি তাকে আটক করে জোরপূর্বক রুমে নিয়ে মারধর করে জামা কাপড় খুলে ববির সাথে নগ্ন ছবি তোলেন।
পরে জানায় এক লাখ টাকা না দিলে ছবিগুলো পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। আমিনুল টাকা দিতে অস্বীকার করলে এরা লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমিনুলের কাছে থাকা ৭ হাজার ৫২০ টাকা, ইনফিনিক্স মোবাইল, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম কার্ড তারা ছিনিয়ে নেন।
এক পর্যায়ে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর ও ব্যাগে থাকা এক্সিম ব্যাংকের ৩টি চেক নিয়ে ফেলেন। পরে আমিনুলকে তারা একটি সিএনজি গাড়িতে করে শিকলবাহা ইউনিয়নের বলফুল ফ্যাক্টরির সামনে বিলের মাঝে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যান। পরে কোন রকমে সেখান থেকে থানা পুলিশের আশ্রয় নেন।
জানতে চাইলে ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, ভিকটিমের অভিযোগ পেয়ে রাতেই অভিযান পরিচালনা করে সকালের দিকে অভিযুক্ত চক্রদের ৪ জনকে গ্রেফতার করি। পরে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, আসামিদের হেফাজত থেকে ভিকটিমের টাকা, চেক, স্ট্যাম্প, মোবাইলসহ একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
সময়ের আলো/আরআই