ঘূর্ণিঝড় রিমাল চলে গেলেও এর প্রভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে দ্বীপ জেলা ভোলা। হাজারো ঘর-বাড়ি বিধ্বস্তের পাশাপাশি গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে পানিতে ডুবে ও ভেসে গেছে অন্তত শত শত গবাদিপশু। এছাড়া ঘর চাপায় মারা গেছে শিশুসহ ২ জন। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন। ২দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে পুরো জেলা আর বন্ধ রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরের আগেই বিদায় নিয়েছে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এর প্রভাবে গতকাল (রোববার) থেকেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ভোলা। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চর নিজাম, কুকরী-মুকরী, লালমোহনের চরকচুয়া, তজুমদ্দিনের চর মোজাম্মেল, চর জহিরুদ্দিন, সোনার চর, দৌলতখানের মেদুয়া, মদনপুর, সদরের মাঝের চর ও চর চটকিমারাসহ অন্তত জেলার অর্ধশত চরাঞ্চল।
চর আলমের মো. মনির হোসেন বলেন, ঝড়ের ফলে চরকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। প্রায় শতভাগ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ঘরের নিচে চাপা পড়ে এবং গাছের নিচে চাপায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া শতাধিক মহিষ, গরু, ছাগল ও ভেড়া জলোচ্ছ্বাসের সময় মেঘনা নদীর পানির স্রোতের সাথে ভেসে গেছে। অনেক গরু ও মহিষ বনের ভিতর গাছের সাথে আটকে আছে যার বেশি ভাগ পানিতে ডুবে মারা গেছে।
ঢালচরের আলম ফরাজী বলেন, এবার জোয়ারের সময় অন্তত ৭ থেকে ১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ অনেকেই গাছের উপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এখানে কোন সাইক্লোন সেল্টার নেই। পুরো ইউনিয়ন এখন প্লাবিত। জীবন ঝুঁকিতে ঢালচরের মানুষ।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, আমার ইউনিয়নটি মুল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বঙ্গোপসাগর মোহনায়, অথচ এখানে নেই কোন সাইক্লোন সেল্টার। ১২ হাজার মানুষ সব সময় ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলার খাজুর গাছিয়ায় এলাকার মো. কালাম বলেন, বনের ভিতরে থাকা তার অন্তত ৫টি গবাদিপশু মারা গেছে। তার মত আরও অনেকেরই শত শত গবাদিপশু মারা গেছে এবং পানিতে ভেসে গেছে।
ঘর বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাহাবুদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় স্ত্রী ও সন্তানসহ ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ঝড়ো বাতাস আর মেঘনার পানির চাপে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরের উপরের চালা নিয়ে গেছে। কোন মতে জীবন রক্ষা করেছি।
এছাড়া জেলার লালমোহনের গজারিয়ায় মনেজা খাতুন (৫৫) নামের এক বৃদ্ধা ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। দৌলতখান উপজেলার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড এলাকায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে মাইশা (৪) নামের এক শিশু মারা গেছে।
জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় ৭৪৩টি সাইক্লোন সেল্টার এবং প্রায় ১৫ হাজার সেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিলো। নিহত এবং ক্ষয়ক্ষতি যাদের হয়েছে তাদের সাহায্য করা হবে।
সময়ের আলো/আরআই