ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রাণীর মাংস যেভাবে হালাল হয়
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪, ৫:৪৩ এএম  (ভিজিট : ৬৬৬)
ইসলামে মানুষের খাবারের জন্য বিভিন্ন প্রাণীর গোশত হালাল করা হয়েছে। কোন ধরনের পশু-পাখি খাওয়া যাবে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে কুরআন-হাদিসে। যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল, সেগুলো আল্লাহর নামে জবাই হওয়াও অন্যতম একটি শর্ত। আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, এমন কোনো পশু-পাখির গোশত খাওয়া জায়েজ নয়। অতএব কোনো প্রাণী যদি মারা যায় কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জবাই করা হয়-সেই প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে, তা তোমরা খাও।’ (সুরা আনআম : ১১৮)

জবাইয়ের সময় জবাই করা প্রাণীর গলার চারটি রগ কাটা প্রয়োজন-১. কণ্ঠনালি ২. খাদ্যনালি ৩. ডান পাশের মোটা রগ ৪. বাম পাশের মোটা রগ। এই চারটি রগ না কেটে যদি চারটির যেকোনো তিনটি কাটা হয় তবু খাওয়া বৈধ হবে। কিন্তু তিনটির কম যদি কাটা হয়, তা হলে সেই পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয় (হেদায়া : ৪/৪৩৭)। বাসাবাড়িতে আমরা নিজেরা যে প্রাণী জবাই করি, সে প্রাণী জবাইয়ের ক্ষেত্রে তো আমরা এসব নিয়ম মেনেই জবাই করি। কিন্তু বাজার থেকে জবাই করা প্রাণীর যে গোশত আমরা কিনে আনি, সেটা জবাইয়ের সময় এসব নিয়ম খেয়াল করা হয়েছে কি না, আমরা কীভাবে বুঝব? এ জন্য এক্ষেত্রে সতর্কতার দাবি হলো-হাঁস, মুরগি বা এমন প্রাণী; যেগুলো আমরা কিনে জবাই করিয়ে পরিষ্কার করে আনি, সেগুলো যে জবাই করছে সে এসব নিয়ম মানছে কি না, সেটা খেয়াল করা। আরও ভালো 
হয়, যদি জবাই করার সময় তাকে একটু সতর্ক করে দিই।

আর গরু বা ছাগল, যেগুলো আমরা সাধারণত কিনে জবাই করাই না, বরং আগে থেকে জবাই করা থাকে; সেগুলো আমরা বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনার চেষ্টা করব। যে কসাই সম্পর্কে জানাশোনা আছে যে, সে ঠিকমতো নিয়ম মেনে জবাই করে, তার থেকে কিনব। তা হলে আমরা গোশতটা হালালভাবে খেতে পারব ইনশাআল্লাহ। প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয় সামনে এসে যায়, যে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আরও বেশি কঠিন। হোটেলে আমরা যে গোশত খাই, সেটা কোথায় কীভাবে জবাই হচ্ছে, এটা কীভাবে বুঝব? এ ব্যাপারেও আমরা সে কথায় বলব, যা আগে বলেছি। হোটেল মালিক থেকে জেনে নেব, যে গোশত আমাদের সামনে পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটা জবাইয়ের সময় নিয়মগুলো মানা হয়েছে কি না! যদি ব্যক্তি মুসলিম হন এবং তিনি বলেন, হ্যাঁ, নিয়মগুলো মানা হয়েছে, তা হলে তা খেতে কোনো সমস্যা নেই।

তবে একটি দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো যাদের থেকে গোশত সংগ্রহ করে, বিশেষ করে মুরগি সংগ্রহ করে এবং আমরা আমাদের বাড়িতে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব দোকান থেকে মুরগি সংগ্রহ করি, দেখা যায় প্রতিদিন তাদের কয়েক হাজার মুরগি বিক্রি করতে হয়। তারা হাজার হাজার মুরগি জবাই করেই বিক্রি করছে। এর প্রতিটা মুরগি জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা কে দেবে? বাইরের দেশ থেকে প্যাকেটজাত যে গোশতগুলো আমাদের দেশে আসে, সেগুলো জবাই ঠিকমতো করা হয়েছে কি না, সেটা আমরা কীভাবে বুঝব?

বিসমিল্লাহ তথা আল্লাহর নাম ছেড়ে দেওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। একটা হলো, অন্তরে আল্লাহর নাম আছে কিন্তু জবাই করার সময় ভুলে যায়। তা হলে সেটা খাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে জবাইকারী মুসলিম হলে ধরে নেওয়া হবে, সে আল্লাহর নামেই জবাই করেছে (আল বাহরুক রায়েক: ৮/১৬৮, ফাতাওয়ায়ে শামী : ৬/২৯৯)। কিন্তু যদি অলসতায় বা ইচ্ছাকৃত আল্লাহর নাম ছেড়ে দেয়, তা হলে সেটা কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। খাওয়া হালাল হবে না। কোনো ব্যক্তি একবার এক হাজার মুরগি জবাই করছে, অলসতায় বা ইচ্ছাকৃত, এতবার বলতে ভালো লাগছে না বলে কোনো একটার ক্ষেত্রেও যদি আল্লাহর নাম ছেড়ে দেয়, তা হলে সেটা স্পষ্টভাবে হারাম হয়ে যাবে। আর কে বলে দেবে, ওই মুরগিটা কার প্লেটে যাচ্ছে! কে খাচ্ছে!

হাদিসে এ ব্যাপারে একটা চমৎকার উদাহরণ আছে। নুমান ইবনু বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তার উদাহরণ সেই রাখালের মতো, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশপাশে চরায়। অচিরেই পশুগুলোর সংরক্ষিত চারণভূমিতে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেনে রেখো, প্রত্যেক বাদশাহরই একটা সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরও জেনে রেখো, আল্লাহর জমিনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলো’ (বুখারি : ৫২)।

এ জন্য যারা তাকওয়াবান, আল্লাহকে ভয় করে, ভালো মুসলিম হতে ইচ্ছুক; তাদের জন্য উচিত এ ধরনের সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। কারণ উল্লিখিত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, সন্দেহযুক্ত ব্যাপারগুলো থেকে বেঁচে না থাকলে একজন মানুষ আস্তে আস্তে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব ধরনের হারাম এবং সন্দেহযুক্ত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার সক্ষমতা দান করুন।

সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close