ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষক সংকটে ভুগছে জবির নতুন বিভাগগুলো
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ১:১৬ এএম  (ভিজিট : ৪০৪)
প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পেরিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি অনুষদে ৩৯টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী ও প্রায় ৭০০ জন শিক্ষক রয়েছেন। একাডেমিক কার্যক্রম সাবলীলভাবে এগিয়ে গেলেও শিক্ষক স্বল্পতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন বিভাগগুলো। ফলে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম। অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার কারণে গবেষণা ও সহপাঠ্য কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সময়ও দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। আবার সেশন জট, সঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে না পারা, সহপাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারাসহ নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও। 

বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। সে হিসেবে অনেক বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মানও বজায় নেই। প্রায় ১০ বছর আগে এসব বিভাগ প্রতিষ্ঠা হলেও এ সংকট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ। কাগজেকলমে বিভাগটিতে ৯ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন মাত্র ৫ জন। বাকি ৪ জনই রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। বিভাগে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র একজন, বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ২০০ জন। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে ল্যাব ও ক্লাসরুম সংকট। এসব কারণে এ বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করতে ৫ বছরের স্থানে সময় লাগছে ৭ থেকে ৮ বছর। এ জটের ফলে বিভাগটিতে বর্তমানে ৬টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা চলমান।

এদিকে একই রকম সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও বিভাগে নেই কোনো পূর্ণ অধ্যাপক। মাত্র ৮ জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন বিভাগটিতে। এর মধ্যে একজন আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ফলে মাত্র ৭ জন শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান চলছে বিভাগটিতে। 

বিভাগটির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৩য় ব্যাচ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে সময় লেগেছে সাড়ে ৭ বছর। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের (৫ম ব্যাচ) গত বছরের ২১ ডিসেম্বর স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়ে ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে ১৯ মার্চ ২০২৪, সময় লেগেছে নিয়মের চেয়ে বেশি দিন। 

২০১৩ ‘ড্রামা অ্যান্ড মিউজিক বিভাগ’ নামে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে বিভাগটি। পরে ৫ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে সংগীত বিভাগ স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা এখনও চলছে। এ ছাড়াও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা চলমান। অন্যান্য বিভাগ থেকে অন্তত ৬ মাস পিছিয়ে এ বিভাগটি। এ বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৪০ জন। বিভাগটিতে মোট ৯ জন শিক্ষকের একজন রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়াও অতিথি শিক্ষক দ্বারা নেওয়া হয় ক্লাস। এর পাশাপাশি রয়েছে ক্লাসরুম সংকট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে রয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষক। একজন শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন একজন শিক্ষক। ওই অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতার অভিযোগে বিভাগের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেনকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভাগটিতে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। এ ছাড়াও এ বিভাগে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নেওয়া হয় ৩০ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে বিভাগে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫০ জন। ফলে বিভাগটিতে অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ ও একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্টা চলছে। 

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। দুইজন অধ্যাপকসহ কাগজকলমে এ বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। তবে ৪ জন শিক্ষক ছুটিতে থাকায় একাডেমিক কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন মাত্র ৬ জন শিক্ষক। প্রতি বছর ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয় এ বিভাগে। এ ছাড়াও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে চালু হওয়া ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে রয়েছেন মাত্র ৭ জন শিক্ষক। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন বিভাগটিতে। ৭ শিক্ষকের মধ্যে ২ জন শিক্ষা ছুটিতে। ফলে বেশি ক্লাস নিতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদের। পাশাপাশি অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক সংকট পূরণের চেষ্টা চলছে বিভাগটিতে।

২০১৫ সালে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইন্সটিটিউটেও রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা। জানা যায়, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন, যার মধ্যে অধ্যাপক ১ জন। একজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় এ ইন্সটিটিউটে বর্তমানে সরাসরি একাডেমিক কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক। বিপরীতে বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেও শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ২০০ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৭ জন। ১ জন শিক্ষক ছুটিতে থাকায় বিভাগে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৬ জন। ফলে আরও ২ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে এ বিভাগটিতে।

প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক থাকা এসব বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষক কম থাকায় অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয় তাদের। দিনে ৩ থেকে ৪টি ক্লাসও নিতে হয় অনেক শিক্ষককে। ফলে গবেষণা বা সহপাঠ্য কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না তারা। 

শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, আমরা যারা আছি তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা আগামী বছরের কোর্সগুলো আরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে শেষ করা যায় সেভাবে পরিকল্পনা করছি। 

নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ক্যাথরিন পিউরিফিকেশন বলেন, নাট্যকলা বিভাগের মূল সমস্যা হলো শিক্ষক সংকট। প্রত্যেক শিক্ষক ৭ থেকে ৮টি কোর্স নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকে। সেখানে শিক্ষকদের রিহার্সালে থাকতে হয়। তবে বর্তমানে সেশন জট কমে আসছে। আমরা আগামী বছরের কোর্সগুলো আরও কম সময়ের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করছি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে এটা আমরা স্বীকার করি। আমরা এটা নিয়ে বসে নেই। আমরা ইউজিসিতে চিঠির পর চিঠি দিচ্ছি। এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট কনসার্ন, বিশেষ করে নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, সংগীত। গত সপ্তাহেও ইউজিসিতে চিঠি দিয়েছি। নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পদ চাওয়া হচ্ছে। ১টা, ২টা করে পদ দিচ্ছে। আমরা গত সপ্তাহেও চিঠি দিয়েছি। এখন অনেক ডিপার্টমেন্টেই সার্কুলার যাচ্ছে। এটা রেগুলার প্রসেস।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগের নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম ও শর্ত আছে। এগুলো পরিপূর্ণ না হলে এখনই আমরা নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। অনুমোদনও নেই। শিক্ষক সংকটের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এসব সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে চেষ্টা চলছে। আমরা নিজেরাও আলোচনা করছি সমস্যা সমাধানের।

সময়ের আলো/আরএস/ 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close