প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪, ৭:০৯ পিএম (ভিজিট : ৩৩০)
খাদ্য শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। বিপাকে পড়েছে বর্গা চাষিরা। দিগন্ত জোড়া মাঠে দক্ষিণা বাতাসে ক্ষেতে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই উৎসব।
বুধবার (২২ মে) হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সোনালি রঙের পাকা ধান। আবহাওয়া ভালো থাকায় দিনরাত নিরলসভাবে শ্রম দিয় এসব ধান কাটছে শ্রমিকরা আর বিভিন্ন পরিচর্যা ও সিদ্ধ শুকান নিয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা। বাজারে চাহিদা মোতাবেক দাম না থাকায় বিপাকে পড়েছে বর্গা চাষিরা।
কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩৩ শতক (এক বিঘা) কাটা-মাড়াই মিলে শ্রমিকরা নিচ্ছেন বিঘাপ্রতি ৪ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বাজারে ধানের চাহিদা ও ভালো দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়েই শঙ্কিত বর্গা চাষিরা। তবে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) হাকিমপুর উপজেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হওয়ায় ধানের দাম বেশি হবে বলে আশা কৃষকদের।
হাকিমপুর উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের মংলা গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার আমি পাঁচ- ছয় বিঘা জমিতে চিকন জাতের ইরি ধান চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন আল্লাহ দিলে অনেক ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু করেছি। বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মণ ধান ঘরে তুলছি। তবে বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় ধানের দামও কমে গেছে। প্রথম এর দিকে ১২'শ টাকা মন দাম থাকলেও বর্তমানে ধানের চাহিদা না থাকায় ১ হাজার ৫০ টাকা ১১'শ টাকা মন।
উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বর্গা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার অন্যর ৬-৭ বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির মালিককে অগ্রিম দিতে ১০ হাজার আবার কাউকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আল্লাহ দিলে ফলন খুব ভালো হয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। কিন্তু বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে তাই ইরি ধান চাষে খরচা বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম নাই। বর্তমান যে ধানের দাম তাতে হয় তো কাটা মাড়াই করে সমান সমান হবে মাঝখানে শুধু ইরির কড়টা পাওয়া যাবে। কারণ এমনিতে এক বিঘা জমি তৈরি থেকে ধান কাটা মাড়াই পর্যন্ত সব মিলে প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ। আবার জমি মালিকের দশ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যাচ্ছে ২৩-২৪ মন। বাজারে ধানের দাম না থাকলে আমরা বর্গা চাষিরা কি করবো বলেন!
ধান কাটা মাড়াই শ্রমিক দলের আঃ হান্নান বলেন, আমরা ১৮ জনের একটি দল, একসঙ্গে ধান কাটা-মাড়াই করছি। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) ধান কাটা মাড়াইসহ ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিচ্ছি। আমরা দিনে প্রায় ৭ থেকে ৮ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করছি। এখন আবহাওয়া ভালো আছে তাই এ দামে ধান কাটছি। ঝড় বাতাস ও বৃষ্টি হলে ধান কাটার দাম বৃদ্ধি পাবে।
হাকিমপুর উপজেলার কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমিতে। এবার উপজেলায় বোরো ধানের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার জন কৃষককে। এপর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন চিকোন জাতের ধান বিঘাপ্রতি ২৪-২৫ মণ হচ্ছে। এছাড়াও উন্নত জাতের বীজ থেকে প্রতি শতকে ১ মণ হারে কৃষকরা ধান পাবেন বলে আশা করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
সময়ের আলো/জিকে