সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে সরকারি হাসপাতালের স্টোর রুমে অগ্নিসংযোগ, উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উপর মারধর ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২১ মে) ভোর রাতের এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মনিরুজ্জামান (৩৮)। পাশাপাশি তিনি মা বোনসহ কর্মস্থলে থাকতেন। এদিন ভোর ৪ টার দিকে হাসপাতালে আগুন জ্বলতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মনিরুজ্জামানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কাজিপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সকাল ১০ টার দিকে তার জ্ঞান ফেরে।
জ্ঞান ফেরার পর আহত উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ধান কাটা মৌসুম শুরু হওয়ায় ভাই-বোন নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের ডিগ্ৰি দোরতা গ্ৰামের বাড়িতে ছিলো। আমি একাই ছিলাম। রাত আনুমানিক ২ টা থেকে ৩টার দিকে ঘুমের মধ্যে গলা টিপে ধরে এবং আঠা দিয়ে মুখ আটকে দেয়। এ অবস্থায় মারতে মারতে টেনে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায়। আমার পিঠে এসিড ঢেলে দেয়। বেদম মারধরে আমি অজ্ঞান হবার আগে আমার সহোদর ভাই চর দোরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বাবলু এবং কাজিপুর উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আলী আসলামসহ কয়েকজনকে চিনতে পারি। এ ঘটনায় আমি কার কাছে বিচার চাইবো?
এ সময় তিনি জানান, পারিবারিক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এর আগেও মনিরুজ্জামানকে বিভিন্নভাবে মারধর, মিথ্যা মামলা, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল প্রতিপক্ষ। এবং শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে দেয়ার মতো অভিযোগ জানান।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হয়নি। এসময় অপঘাতে মৃত্যুর আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান অভিযুক্ত ও আহতের সহোদর ভাই চর দোরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বাবলুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অপর অভিযুক্ত উপজেলা যুবলীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম বলেন, আমি গতকাল (সোমবার) বিকেলে কাজিপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ঘটনার সাথে আমি জড়িত না। মনিরুজ্জামানের সাথে আমার কোনো আত্মীয়তা বা বিরোধ কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোমেনা পারভিন পারুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টোররুমসহ ২টি রুমের আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। স্টোরে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ওষুধ ছিলো। মনিরুজ্জামান একটু সুস্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাজিপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।