প্রকাশ: শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৮:২১ পিএম (ভিজিট : ৯৯০)
মাদারীপুরে স্কুল ছুটির পর টয়লেটে আটকা পড়েছিলো প্রথম শ্রেণির ৭ বছরের এক শিক্ষার্থী। ৬ ঘণ্টা বাথরুমে আটকা থাকার পর সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ৯নং পাঁচখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এই ঘটনা। পরে অসুস্থ অবস্থায় শিক্ষার্থী রাফিন হোসেনকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
রাফিন একই এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে। সে স্থানীয় একটি শিশু নিবাসে থাকেন।
বিদ্যালয়, শিক্ষার্থীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে সহপাঠীদের সাথে বিদ্যালয়ে আসে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের টয়লেটে যায় সে। শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা থাকার কারণে সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরি খোকন খান শ্রেণিকক্ষ ও টয়লেটের দরজা তালাবদ্ধ করে চলে যায়। এতে টয়লেটের ভেতর আটকা পড়ে প্রথম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী রাফিন। পরে ভেতর থেকে বের হতে না পারায় রাফিন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। এসময় রাফিনের ডাক কেউ শুনতে পায়নি। রাফিন দুপুরের পর বাড়িতে না গেলে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া এক পথচারী শিশুটির কান্নাকাটি শুনতে পান। পরে টয়লেটের ভেতর শিশুটি তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয়। এসময় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
শিশু রাফিন হোসেন বলেন, আমার টয়লেট পায়। তাই আমি টয়লেটে যাই। কিন্তু এসময় স্কুল ছুটি হয়ে গেলে, সবাই দরজা বন্ধ করে চলে যায়। আমি আর বের হতে পারিনি। পরে অনেক চিৎকার করলেও কেউ শোনেনি। অনেক সময় গেলে একজন আমার কান্না শুনতে পায়। পরে আমাকে টয়লেট থেকে উদ্ধার করা হয়। আমি খুব ভয় পেয়েছি। চিৎকার করতে করতে গলা ব্যথা হয়ে গেছে।
মাদারীপুর সদরের ৯নং পাঁচখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এই ঘটনা কেউ ইচ্ছাকৃত করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, কেন এমন ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এই ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের সাথে এমন ঘটনা কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে নির্মিত ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমার নাম শোনেনি বা দেখেনি, বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দর্শক খুব কমই আছে। কী মর্মান্তিক গল্প! ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সবার অজান্তে তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে একটি ১২ বছর বয়সের ছাত্র। আর তালাবদ্ধ বাথরুম ১১ দিনের ঈদের ছুটি শেষে খোলে। উদ্ধার হয় ছেলেটির মরদেহ। স্কুলের দপ্তরি স্বেচ্ছায় এই মৃত্যুর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলে যান। এমনই একটি করুণ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। ঠিক সিনেমার মত ঘটনা ঘটলো মাদারীপুরে। তবে রুদ্ধশ্বাস ৬ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।