ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শৈল্পিক নির্মাণে বাঁশের নান্দনিক পণ্য
নন্দিত উদ্যোগ ‘স্বপ্নচূড়া’
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ১:৪০ এএম  (ভিজিট : ৩৪২৪)
প্রান্তিক জনপদে অকৃৃষি খাতে আয় বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হস্ত ও কারুপণ্য। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব হস্ত ও কারুপণ্যের বৈশি^ক চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বাঁশের তৈরি নান্দনিক পণ্যের শৈল্পিক নির্মাণ আমাদের আদি ঐতিহ্য। সময় আর যুগের পরিবর্তনে নিত্যনতুন প্রযুক্তি এলেও এখনও প্রয়োজনের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি বাঁশের তৈরি হস্ত ও কারুপণ্য। কখনো প্রয়োজন, কখনো শৈল্পিকসামগ্রী-দুটিই মেটাতে সক্ষম বাঁশজাত পণ্য। বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ৫০ ধরনের নান্দনিক পণ্য তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার তরুণ উদ্যোক্তা মহিদুল ইসলাম। নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন বাঁশ শিল্প কর্নার। নাম দিয়েছেন স্বপ্নচূড়া।

ঘর সাজাতে সৌখিন ব্যক্তিদের কাছে মহিদুলের এসব হস্তশিল্পের দারুণ কদর রয়েছে। শহর-গ্রামের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল, রিসোর্টেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। বাজারে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য এসব পণ্য বিক্রি হয় চড়া দামে। এ কারণে হস্তশিল্পে অনেক উদ্যোক্তাকেই অনুপ্রেরণা জোগায় মহিদুলের নন্দিত উদ্যোগ স্বপ্নচূড়া। বাঁশের নান্দনিক হস্ত ও কারুপণ্যের শৈল্পিক নির্মাণে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন মহিদুল ইসলাম।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামধন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির আঙিনায় একটি টিনশেডের ঘর। এই ঘরেই মহিদুল গড়ে তুলেছেন স্বপ্নচূড়া বাঁশ শিল্প কর্নার নামে একটি হস্তশিল্পের কারখানা। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে কারখানায় কাজে ব্যস্ত তিনি। এখানে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া তিনি একাই নিজ হাতে তৈরি করছেন বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে লণ্ঠন, ওয়াল ল্যাম্প, শোপিস বিভিন্ন ধরনের ফুলদানিসহ অর্ধশতাধিক নান্দনিক পণ্য। এসময় স্থানীয় কিছু দর্শনার্থীরও দেখা মেলে। তারা সবাই এসেছেন মহিদুলের স্বপ্নচূড়া বাঁশ শিল্প কর্নারের কর্মযজ্ঞ দেখতে।

কারখানার পাশেই বসতবাড়ির একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে স্বপ্নচূড়ার শোরুম হিসেবে। সেখানে ঢুকতেই দেখা গেল, বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে মহিদুলের তৈরি বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও শৈল্পিকসামগ্রী। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি, ফলের ঝুড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, ল্যাম্পসেট, চায়ের কাপ, মগ, পানির বোতল, গ্লাস, জগ, ট্রে, মোবাইল স্ট্যান্ডসহ আরও অনেক কিছু। তার প্রতিষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে আছেন স্ত্রী ফারজানা ববি রজনী আর ছেলে ফারহান মুহিব নিহাল।

বাঁশ শিল্পের নিপুণ কারিগর মহিদুল ইসলাম জানালেন, একটা সময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল প্রচুর। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে শৈল্পিক নির্মাণে নান্দনিক ও সৌখিন পণ্য তৈরিতে মনোসংযোগ করেছেন তিনি। বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব হস্ত ও কারুপণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র ডেকোরেশনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট, অফিস, রিসোর্ট, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় নান্দনিক ডেকোরেশন হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এগুলো। পাশাপাশি ঘর সাজাতেও এসব পণ্যের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এগুলো তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ কেটে প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক উপকরণ দিতে হয়। তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে তা রোদে শুকানো হয়। পরে এসব বাঁশ আকারভেদে কেটে প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হয়।

বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করছেন তিনি। এ ছাড়া স্বপ্নচূড়া বাঁশ শিল্প কর্নার নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে তার। অনলাইনে এই পেজের সহায়তায় অর্ডার নিয়েও পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। পণ্যগুলো প্রকারভেদে ১০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ থেকে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। মহিদুল বলেন, সম্ভাবনা থাকলেও হস্ত ও কারুশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ পুঁজির অভাব। এ ছাড়া বিপণনে সীমাবদ্ধতা, কাঁচামাল প্রাপ্তির সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির মতো আরও কিছু বিষয় এই খাতের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে আছে।

প্রবীণ সাংবাদিক হাবিবর রহমান হবি বলেন, দেশি হস্তশিল্পে পণ্য বৈচিত্র্য অনেক রয়েছে, তবে মানসম্মত পণ্যের সংখ্যা কম। পুঁজি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং মানসম্মত পণ্য কম থাকায় এগোতে পারছেন না সম্ভাবনাময় এ খাতের উদ্যোক্তারা। এই খাতের বাজার বাড়াতে হলে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close