ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অস্বস্তিতে সিলেটের বাড়ির মালিকরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩:১২ এএম আপডেট: ১৭.০৫.২০২৪ ৪:১৫ এএম  (ভিজিট : ২৩০৫)
বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক)। এতে এক অস্বস্তিকর সময় পার করছেন নগরীর বাড়ির মালিকরা। দমবন্ধ অবস্থায় সময় কাটছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে গৃহকর কমানোর কোনো ঘোষণা না দিলেও নাগরিকদের রিভিউ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পাশাপাশি পুরাতন ২৭ ওয়ার্ডেও কাউন্সিলরদের প্রধান করে রিভিউ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তবে সিসিকের এমন কাণ্ডে নগরবাসীর সঙ্গে ক্ষুব্ধ সুশীল সমাজও। 
তারা বলছেন, শতকরা হারে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে হঠাৎ বড় অঙ্কের হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করে প্রকাশ করা উচিত হয়নি নগরভবনের। বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি, জাসদসহ সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

সিলেট নগরীর বাড়ির মালিকদের অনেকেই জানান, সম্প্রতি সিটি করপোরেশন থেকে বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকা দেখে হতবাক তারা। বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ শতাংশ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যিনি আগে দিতেন ৩ হাজার টাকা, তার ওপর ট্যাক্স ধার্য হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ৮০০ টাকার ট্যাক্স করা হয়েছে ১৮ হাজার টাকায়।

সিসিক সূত্র জানায়, বর্তমানে নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য ফিল্ড সার্ভে হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। ২০২১ সালের আগস্টে তৎকালীন সিসিক পরিষদের বিশেষ সভায় সেটি পাস হয়। কর ধার্যের অর্থবছর নির্ধারণ করা হয় ২০২১-২২ সাল। ওই অ্যাসেসমেন্টে মোট ৭৫ হাজার ৪৩০টি হোল্ডিংয়ে ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেটি অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ২০২১ সালের অক্টোবরে তা অনুমোদিত হয়। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ের কারণে তৎকালীন সিসিক পরিষদ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় স্থগিত রাখে।

সিসিকের সম্প্রতি আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে রাজস্ব শাখা জানিয়েছে, ইমারত ও জমির ওপর কর ৭ শতাংশ, ময়লা নিষ্কাশন রেট ৭ শতাংশ, সড়কবাতি রেট ৭ শতাংশ ও পানি ৩ শতাংশ-এই মোট ২০ শতাংশ। অন্যদিকে স্থাপনা পাকা হলে প্রতি বর্গফুট ৫, আধা-পাকা ৩, কলোনি ৫ ও বাণিজ্যিক ৭ টাকা। যদি কারও হোল্ডিংয়ের ভাড়া মূল্য প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হয়, তবে নিজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কর ভিত্তি হিসাবের জন্য তার হোল্ডিংয়ের বার্ষিক মূল্য হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ হবে বার্ষিক ১২ হাজার টাকা। তবে সিসিক ছাড় দিয়েছে। যেমন-রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ দুই মাসের ভাড়া মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (যদি) ১০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মালিক নিজে ভবন ব্যবহার করলে, ভবনের বার্ষিক মোট মূল্য থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ অর্থ ছাড় দেওয়ার পর অবশিষ্ট ভাড়া মূল্যের ওপর আরও ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। সব ছাড়ের পর (মাসিক ভাড়া ১০ হাজার হিসাব ধরে) বার্ষিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নয়, অর্ধেক ভাড়া অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকার করের ভিত্তি হিসাবে বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন করে ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অস্বাভাবিক হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও বাসদ।

এদিকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নগরভবনের প্রাঙ্গণজুড়ে ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্পটি ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ মে পর্যন্ত। ক্যাম্পের মধ্যে রয়েছে ৪০টির মতো বুথ। এর মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা বুথ, একটি ইনফরমেশনের জন্য এবং বাকিগুলো লিখিতভাবে আপত্তি জানানোর।

এদিকে শুধু তথ্য জানা বা ট্যাক্স দেওয়ার ওয়ার্ড-নির্দিষ্ট বুথগুলোর সামনেই লম্বা লাইন নয়, আপত্তি জানানোর কয়েকটি বুথের সামনেও মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। তারা নির্দিষ্ট ডি-ফরম পূরণ করে লিখিতভাবে তাদের আপত্তি জানাচ্ছেন।

নগরীর কাজীটুলার বাসিন্দা রুবেল আহমদ বলেন, আমার থাকার ঘর এক তলা, পাকা। আগে বছরে ট্যাক্স দিতাম ৫০০ টাকা। এখন নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা। দোকান কোটার জন্য আগে বছরে ট্যাক্স দিতাম ৮০০ টাকা। এখন দিতে হবে ১৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ট্যাক্সের কারণে আমি রীতিমতো দিশাহারা।

সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় তাদের ওপর বোঝা না চাপিয়ে নতুন ট্যাক্সদাতা তৈরি করা উচিত। এ কার্যক্রম স্থগিত করে সহনীয় হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর দাবি তার।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স পার্সেন্টিজ আকারে বাড়ানো উচিত ছিল। আগে কে কি করেছেন, তার দায়ভার নগরবাসী নেবে কেন। বর্তমান হোল্ডিং ট্যাক্সের কার্যক্রম স্থগিত করে একটি সার্বজনীন সভা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকালে মেয়র মহোদয়রা অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করেছেন, আবার কারও কারও হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে নির্ধারণ করেছেন। যার ২০ হাজার টাকা আসার কথা, তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেছেন। সবশেষ অ্যাসেসমেন্টে এ কারণে অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স বেশি বলে মনে হচ্ছে। কারও কাছে ট্যাক্স বেশি মনে হলে লিখিতভাবে আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি যাচাই করে পরে তার ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স ২০০৭ সাল থেকে কার্যকর হয়। তবে ২০১১ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স নগরবাসীর কাছ থেকে আদায় করা হতো। তবে বর্তমানে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্সের অ্যাসেসমেন্ট ২০১৯-২০ অর্থবছরে করা হয় এবং এখন সেটি মহানগরের পুরাতন ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য কার্যকর করা হয়েছে। আর নতুন ওয়ার্ডগুলোতে অ্যাসেসমেন্টের কাজ চলমান রয়েছে, শেষ হলে এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ প্রকাশ করবে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close