ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রশ্ন সাংবাদিক নেতাদের
এক ব্যক্তি সাত-আট ব্যাংকের মালিক হন কিভাবে
লুটপাট ঢাকতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৬:৩১ পিএম  (ভিজিট : ৬৮২)
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে, যে লুটপাট চলছে সেগুলো ঢাকতেই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে, এতে কি চোরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে? দেশের ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ, কিভাবে এটি হতে পারে। রাতারাতি এক ব্যাংকের মালিকানা বদলে গেলো। এভাবেই এখন চলছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত।

বুধবার (১৫ মে) ইআরএফ কার্যালয়ে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা। এ সময় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাসহ ইআরএফ এর সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ। সাংবাদিকদের নেতাদের এই অবস্থানে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইআরএফ সভাপতি রেফোয়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাজ্জাদ আলম খান তপু, অপর অংশের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন আহমেদ, ইআরএফের সাবেক সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল মঞ্জুর, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান ও এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন, অথচ কিছু বলা যাবে না এটাতো হতে পারে না। একজন ব্যক্তি সাত থেকে আটটি ব্যাংকের মালিক কিভাবে হন, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সাংবাদিকরা। সামনে বাজেট আসছে। এমন এক সময়ে কেনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে? হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ সব বড় বড় আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে গণমাধ্যম।

তিনি বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আমাদের বলেছেন যে, তিনি সাংবাদিক প্রবেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সমাধানে কাজ করছেন। তবে আমাদেরও এ বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে, এতে কি চোরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে? দেশের ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ। রাতারাতি এক ব্যাংকের মালিকানা বদলে গেলো।

শ্যামল দত্ত আরও বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে আর বসে থাকার সময় নেই। ইআরএফ একটি সম্মানিত সংগঠন। এই আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আপনাদের সংঙ্গে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাব, ডিআরইউসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনকে সঙ্গে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিকদের রিপোর্টগুলো সরকারকে সাহায্য করে। তাই এই আন্দোলন আরও জোরেসোরে চালাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের দাবি আদায় করেই ছাড়ব।

বিএফউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন, এটা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। শেয়ারবাজার, ডলার বাজারে যেসব অপকর্ম করা হয়, এগুলো তো কর্মকর্তারাই ঘটান, সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে তুলে ধরেন।

ঢাকার বাইরে থাকায় সভায় সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ইআরএফ এর আন্দোলন সংগ্রামে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএফইউজে’র অপর অংশের সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ।

সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসানো হয়েছে, তিনি ওই পদের যোগ্যই নন। তার যে দুর্বলতা আছে, সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বর্তমান গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে?

তিনি বলেন, কিছু পীর-আওলিয়া-দরবেশদের সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। তারা দরজায় খিল দিয়েছে, কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারেনি। প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নিব। গভর্নরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিব না। আমাদের অধিকার আদায় করেই আমরা ছাড়ব।

বিএফইউজের মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিংখাতে এখন আড়তদার তৈরি হয়েছে, একজনই অনেক ব্যাংকের মালিক। এছাড়া রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরির মতো ঘটনার খবর যেন জনগণের সামনে না আসে, তাই চোরদের পাহারা দেওয়ার জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় আমরা বিস্মিত হয়েছি, এর মাধ্যমে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (নির্বাচিত) সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের মতো প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, আর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে স্বাধীনতাকে কলুষিত করছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে, তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনি তথ্য দিবে না, তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে বলেই আমরা ধরে নেব। গভর্নর তো কিছুদিনের জন্য। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে৷ যুগে যুগে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করে না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উন্মুক্ত করা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।

ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে আমাদের যেসব তথ্য দেওয়া এখন আর সেগুলো হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের সমস্যা হওয়ার কারনেই প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে। এসব করে তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এমন করছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরও অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো সাংবাদিক ভাই-বোনেরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, তা এখন পারছেন না।

তিনি বলেন, গভর্নর আমাদের দেশ প্রেমিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে আমাদের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক লোক আর দেখছি না। আমরা যা করি দেশের জন্যই করে থাকি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি দেশপ্রেমিক হতো, তাহলে ব্যাংকখাতের অবস্থা এতো ভয়াবহ হতো না। সহকর্মীরা বলছেন যে, তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। যা খুবই ভয়ানক ব্যাপার। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close