ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

এক লাখ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৩:১৫ এএম  (ভিজিট : ৪২৪)
পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের পাম্প তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পানি না থাকায় জিকের প্রধান ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়রা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার আয়োজন করছেন। প্রতিদিন বিকালে খেলাধুলায় মেতে উঠছে তারা। জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প বন্ধ থাকায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলার প্রায় এক লাখ হেক্টর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে কয়েক হাজার টন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া-৩ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কামারুল আরেফিন বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সংকট নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলেছি। সেচ প্রকল্পের জন্য ১২শ কোটি টাকা ও জিকে প্রকল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আরও ১২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে এর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এ প্রকল্প একনেকে পাস হবে বলে আমি আশাবাদী। এ ছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় সুপেয় পানির জন্য আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে আর পানির সমস্যা থাকবে না।

ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দুটি পাম্প আগে থেকেই নষ্ট ছিল। তৃতীয় পাম্পটি দিয়ে ৩১ জানুয়ারিতে ক্যানেলে পানি সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই পাম্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জাপানের ইবারা করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাম্পটি সচল করা হয়েছে। কিন্তু ইনটেক চ্যানেলে স্বাভাবিক পানির স্তর না থাকায় সেচ কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। সেচের জন্য পদ্মায় পানি বৃদ্ধির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। 

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, সেচ প্রকল্পের পাম্প বন্ধ হওয়ার কারণে বোরো চাষে কৃষকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিয়ষটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। পানির কারণে এবার ফলন কম হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের ব্যয় অনেক বাড়বে। কুষ্টিয়া অঞ্চলে ৫৪৬ হেক্টর জমিতে পানির অভাবে চাষ করা যাচ্ছে না। এতে কুষ্টিয়া অঞ্চলেই প্রায় ২৫শ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।  

গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর আমরা এখনও পানি পাইনি। এই মৌসুমে পানি পাওয়া যাবে না বলে তথ্য পেয়েছি। আমরা এখন শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে সেচ দিচ্ছি। এভাবে এক বিঘা জমি চাষ করতে প্রায় ৭ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। এতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়বে। বাড়তি খরচের আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি সেচ দিতে হয়। কখনো দিনে দুবারও সেচ দিতে হয়।

স্থানীয়রা জানায়, পানির অভাবে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। একদিকে চাষিরা দিশাহারা অন্যদিকে ধ্বংসের মুখে এলাকার জীববৈচিত্র্য। জিকে খালে পানি না থাকায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কুষ্টিয়া জেলায় এক লাখেরও বেশি টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। সুপেয় পানির অভাবে মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। গৃহস্থালি কাজ ও গবাদিপশু পালনেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক কৃষক মাঠে গভীর নলকূপ বসিয়ে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিলেও ধান হচ্ছে না। ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।  

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছর পানি দেওয়ার কথা ভারতের। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি না দেওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে পানি সংকট।

আগে বিঘাপ্রতি কৃষকরা মাত্র ২০০ টাকায় জিকে সেচ প্রকল্পের পানি পেতেন। কিন্তু এখন জিকের পানি না পাওয়ায় শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। স্বল্প খরচের সেচব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ৩৫ গুণ বেশি খরচ করে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। 

জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় শুরুতে তিনটি প্রধান পাম্প ও ১২টি সাবসিডিয়ারি পাম্পের সাহায্যে খালে পানি দেওয়া হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একে একে সব পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ সচল পাম্পটির ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নষ্ট হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close