প্রকাশ: রবিবার, ১২ মে, ২০২৪, ৯:৪৮ পিএম (ভিজিট : ৭৮২)
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী হালিমা খাতুন। হালিমা উপজেলার আলোকদিয়ার পূর্বপাড়ার প্রান্তিক কৃষক হামিদুল ইসলামের মেয়ে। হালিমা মফিজ উদ্দিন তালুকদার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
হালিমার মা শহিদা খাতুন বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার বড় হালিমা। হালিমার জন্মের ছয় মাস পর থেকে তার শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সে শারীরিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়। সাধ্য মত চিকিৎসা করানোর পরও শরীরের খুব একটা উন্নতি দেখা যায়নি। প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ না করার ফলে এখনও প্রায় সময়ই হালিমাকে রক্ত দিতে হয়। আর শ্বাসকষ্ট তো আছেই।
হালিমার মা বলেন, পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা হালিমাকে লেখাপড়া করাতে নিষেধ করলেও আমি ছোট থেকেই তাকে লেখাপড়া করিয়ে এ পর্যন্ত এনেছি। হালিমা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়েছিলো। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এবারের এসএসসি পরীক্ষাতেও সে জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি।
অদম্য হালিমা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমার লেখাপড়ার খুব ইচ্ছা। আমার মা আমাকে হুইল চেয়ারে করে স্কুলে নিয়ে যান আবার নিয়ে আসেন। মায়ের কারণেই আমি এপর্যন্ত আসতে পেরেছি। পাশাপাশি আমার স্কুলের শিক্ষকরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার ইচ্ছা আমি লেখাপড়া করে সুশিক্ষিত হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে চাই। তবে আমি পরীক্ষায় যে রেজাল্ট করেছি এতে আমার পরিবারের সদস্য ও আমার শিক্ষকরা খুশি হলেও আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।
মফিজ উদ্দিন তালুকদার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নুরুল আলম বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে হালিমা আমাদের স্কুলে পড়েছে। শারীরিক সমস্যার কারণে সে নিয়মিত স্কুলে আসতে না পারলেও লেখাপড়ায় সে অনেক ভালো শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে হালিমা। প্রতিবন্ধকতা যে কোন বাধা নয়, হালিমার এই কৃতিত্ব তারই প্রমাণ। তার কৃতিত্বে আমরা শিক্ষকরা অনেক খুশি। আমি তার সফলতা কামনা করছি।
হুইল চেয়ারে পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য হালিমা। ছবি: সংগৃহীত