ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রমত্ত পদ্মা এখন উত্তপ্ত বালুপথ
প্রকাশ: রবিবার, ১২ মে, ২০২৪, ১:৫০ এএম  (ভিজিট : ৩৪০)
বিপুল জলরাশির খরস্রোতা পদ্মার চিরচেনা রূপ আর নেই। নদীর বুকে এখন ধু ধু বালুচর। যত দূর চোখ যায় শুধু বালু আর বালু। উত্তরাঞ্চলের ‘জীবন রেখা’ পদ্মা নদীতে এখন কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও খানিকটা পানির বিস্তৃতি দৃশ্যমান। উৎস্য ও উজান থেকে পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ বালুর নিচে চাপা পড়ছে। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে মরুময়তা। পদ্মায় পানি সংকটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও তিনটি নদী মহানন্দা, পাগলা ও পুনর্ভবার অস্তিত্বও এখন হুমকির মুখে। স্থানীয়রা বলছে, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোনো বিকল্প নেই। 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচেপড়ে নদীর পানি। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। প্রতি বছরই ভাঙনের কবলে পড়ে নদী। পদ্মা নদীর তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়া মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবার ড্যামের নির্মাণকাজ চলছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে মাস তিনেকের জন্য পানি থাকলেও বছরের ৯ মাসই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে শুধু ঘোলা পানিই চোখে পড়ে, স্বচ্ছ পানির মায়াবী দৃশ্য আর নেই। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে একসময়ের প্রমত্ত পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে। পানিশূন্য পদ্মায় আটকে যাচ্ছে পাথরবাহী জাহাজ। মাঝ নদীতে গোসল করছে শিশুরা। পদ্মা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানন্দার অস্তিত্বও প্রায় বিলীন। পাগলা নদীর আগের পাগলামী আর নেই। পুনর্ভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নদীর বুকে নৌকা নয়, চলে চাষাবাদ। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী এখন অস্তিত্ব হারানোর পথে। এবারও পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে নেমে যায়। বৈশাখে খরা মৌসুমের চিত্র আরও করুণ। সবমিলিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতেও। হারিয়ে গেছে অর্ধশত দেশি প্রজাতির মাছ। নৌ যোগাযোগ আর নেই। নদীর বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসল।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল। 

সরেজমিন দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে মহানন্দা নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন পদ্মা পারের কৃষকরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদী তীরবর্তী বেশির ভাগ মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, একসময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। নদীর পানি চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমানা নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্রোতা। নদী পারের মানুষের কাছে এই মহানন্দা ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখে পড়ে না। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি। 

কথা হয় স্থানীয় কৃষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের জমি মহানন্দা নদীর ভাঙনে তলিয়ে যায় অনেক আগেই। ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ার পর আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়েছি। এখন চাষাবাদ করে ভালো আছি।

সময়ের আলো/আরএস/   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close