ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পরকালে যাদের আমল ওজন করা হবে না
প্রকাশ: শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ১২:৩৩ এএম  (ভিজিট : ৬৮৮)
কেয়ামতের দিন হবে বিভীষিকাময়। সেদিনের ভয়াবহ অবস্থার কথা কে না জানে; সেদিন কেউ কারও হবে না। প্রত্যেকে ‘ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি’ বলে চিন্তিত থাকবে। সেদিনের ভয়াবহতা ও বিভীষকার কথা অনেক হাদিসে এসেছে। এক হাদিসে রয়েছে, ‘হাশরের মাঠে ভয়ে প্রত্যেকে বলতে থাকবে, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। শুধু মুহাম্মদ (সা.) উম্মত নিয়ে (নিজেকে ছাড়া) চিন্তা করবেন’ (বুখারি : ২৭১২)। সেদিন ভয়াবহতার প্রধান কারণ হলো, প্রত্যেক মানুষের পূর্বের ভালো-মন্দ সব আমল ও আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং মিজানের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন আমলনামা সামনে রাখা হবে। তখন আপনি অপরাধীদের দেখবেন, তাতে যা লেখা আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলবে-হায়, আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন আমলনামা, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে? তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে’ (সুরা কাহাফ : ৪৯)। আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আমি ন্যায়ানুগ মিজান স্থাপন করব। ফলে কারও প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না। যদি কোনো কর্ম তিল পরিমাণও হয়, তবে তাও আমি উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট’ (সুরা আম্বিয়া : ৪৭)। হাশরের মাঠের এসব ভয়াবহতার কথা জানলে ভয়ে লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু কঠিন এই অবস্থাতেও নানাবিধ কারণে কিছু মানুষের সেদিন বিচার হবে না। তাদের আমল ওজন করা হবে না, তারা হিসাব দেওয়া ছাড়া তাদের ফায়সালা হবে।

নবী ও রাসুলগণ : মানবজাতির সর্বোত্তম কাফেলা হচ্ছে, নবী-রাসুলগণ। যাঁরা আল্লাহ তায়ালার ওহির জ্ঞান ও বিধি-বিধান মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল এসেছিলেন। তাঁরা ছিলেন জগদ্বাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় করুণা ও রহমতস্বরূপ। নবী-রাসুল সবাই মাসুম বা নিষ্পাপ। তাই কাল কেয়ামতের ময়দানে তাঁদের আমলের কোনো হিসাব হবে না এবং ওজনের পাল্লায় মাপা হবে না; তাঁরা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুল! আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে, তা প্রচার করুন। যদি তা না করেন, তবে তার অর্থ হবে, আপনি আল্লাহর বার্তা পৌঁছাননি।’(সুরা মায়িদা : ৬৭)

ফেরেশতাগণ : ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার অন্যতম বিস্ময়কর এক সৃষ্টি। তারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। ফেরেশতারা যদিও আল্লাহ তায়ালার তসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদির ভেতরে সদা-সর্বদা লিপ্ত থাকেন, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মৌলিকভাবে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন জিন ও মানুষকে। এর বাইরে অন্য কোনো মাখলুককেই তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; সেই হিসেবে অন্য কোনো মাখলুকের আমল পাল্লায় মাপা হবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)

পাগল ও অপ্রকৃতিস্থ : যারা পাগল অবস্থায় বালেগ হয়েছে এবং পাগল অবস্থাতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তারা যেহেতু শরিয়তের বিধি-বিধান ও হুকুম-আহকামের মুকাল্লাফ (সম্বোধিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত) না; তাই তাদের আমল ওজন করা হবে না, তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের ওপর হতে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগ্রত হয়। পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সুস্থ হয়। নাবালেগ যতক্ষণ না বালেগ হয়।’ (আবু দাউদ : ৪৩৯৮)

অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তান : মুসলমানদের যেসব সন্তান নাবালেগ অবস্থায় মারা যায় তারাও বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তাদের আমলনামা ওজন করা হবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে‌, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানদের (ছোট ছোট বাচ্চা যারা নাবালক অবস্থায় মারা গেছে) জান্নাতে ইব্রাহিম (আ.) তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৮৩২৪)

সত্তর হাজার লোক : উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে এমন ৭০ হাজার লোক থাকবে, যাদের আমল ওজন করা হবে না; বরং তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মহান প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের কোনো রকম শাস্তি হবে না। প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও ৭০ হাজার করে এবং আরও থাকবে আমার মহান প্রতিপালকের তিন মুঠো পরিমাণ (সুনানে ইবনে : ৪২৮৬)। আরেকটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাঁর কতিপয় বান্দার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করবেন। ফলে তিনি তাদের হিসাব থেকে মুক্তি দেবেন। তিনি তাদের বলবেন, ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ায় তোমার অপরাধ আড়াল করেছিলাম, আজ আমি তোমার সে অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।’ (বুখারি : ৬০৭০)

কাফের-মুশরিক : এমন কাফের মুশরিক যাদের কুফুরির ওপরই মৃত্যু হয়েছে। কাল কেয়ামতে তাদের আমল ওজন করা হবে না, বরং তারা বিনা হিসাবে জাহান্নামে চলে যাবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এরাই সেসব লোক যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতগুলো তাঁর সামনে উপস্থিতির বিষয়টিকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের যাবতীয় কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে। আমি কেয়ামতের দিন তাদের কোনো ওজন গণ্য করব না’ (সুরা কাহাফ : ১০৫)। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন তাদের আমল ওজনের কোনো প্রয়োজনই হবে না।

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা
  মধুপুর, টাঙ্গাইল

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close