ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ধান বেচে উঠছে না খরচ, দিশেহারা কৃষক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ৭:৩১ পিএম  (ভিজিট : ৬৬২)
আদমদীঘিতে এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম কম হওয়ায় কৃষকরা রয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়। চলতি ইরি-বোরো মৌসুম ছিল কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ খরচের বছর। সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম ছিল রেকর্ড পর্যায়ে। এবারে খরার কারণে সেচও লেগেছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের মজুরি। অথচ সীমাহীন খরচের এই মৌসুম শেষে ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। দিন দিন কমেই চলেছে ধানের দাম। চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটার শুরুতে ধানের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায় ছিল। কিন্তু এলাকার ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি দিন ধানের দাম মণ প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে কমছে। এতে করে উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে দাবি কৃষকদের।

জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এবছর প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৫০ টাকার বেশি। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে এলাকাভেদে সরু জাতের ধানের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ দামে ধান বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না বলে দাবি কৃষকের। 

কৃষকরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মধ্যে, যা এবছর সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাড়ায় দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সারের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া বীজ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ধান পরিচর্যা, কাটা শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে।

উপজেলার কেশরতা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সার ও সেচের খরচ বেশি হওয়ায় ধার করে ধান চাষ করতে হয়েছে এবার। বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকা সারের জন্য ও সেচে আরও হাজার টাকা বেশি লেগেছে। এখন ধান বেঁচে সেটা পরিশোধ হচ্ছে না। পাওনাদারের তাগাদায় বাধ্য হয়ে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

উপজেলা সদরের কাশিমালা গ্রামের আব্দুল আলিম এবছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন। সারের দাম বাড়ার পরে খরচ তার কত বেড়েছে সেটার হিসাব রেখেছেন তিনি। একই গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, এর আগে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদে সারের জন্য মোট ২ হাজার ৯৯০ টাকা খরচ হতো। এবারে সার কীটনাশকের দাম বাড়ানোর পর খরচও বেড়েছে। 

মন্ডবপুর গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, আমার জমিতে এবার বোরোর ফলন বাম্পার হয়েছে। আশপাশের সবারই ফলন ভালো হয়েছে। তারপরেও খরচের কারণে কারও খুশি নেই। কারণ খরচের তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি, বরং দিন দিন কমেছে। 

তিনি আরও জানান, আবাদের ব্যয় ছাড়াও প্রতি বিঘায় ধান কাটতে খরচ পড়ছে পাঁচ হাজার টাকা। জমি থেকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে আরও এক হাজার টাকা এবং ধান মাড়াই করতে খরচ হয়েছে আরও ৫০০ টাকা। ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে ওঠানো পর্যন্ত তার খরচ প্রায় ১৭ হাজার টাকার মতো।

তিনি দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরও এবং চলতি বছরের শুরুতেও ধানের দাম ছিল আশানুরূপ। দিন যাচ্ছে আর অসাধু ধান ব্যবসায়ী আড়ৎদারদের কারণে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। 

আদমদীঘি নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ বলেন, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। ধানের ফলনও বেশ ভালোই। নতুন ধান কাটা মুহূর্তে ধানের দাম কিছুটা বেশি ছিল। তবে কি কারণে ধানের দাম কমছে তা সরজমিনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ইরি-বোরো ধান   আদমদীঘি-বগুড়া  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close