ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

খাবার অপচয়ে হারিয়ে যায় বরকত
প্রকাশ: বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ৬:৩০ এএম আপডেট: ০৮.০৫.২০২৪ ৮:১৯ এএম  (ভিজিট : ৩৭৫)
খাবার হলো মহান আল্লাহর নেয়ামত। আমাদেরও উচিত এ খাবারকে সম্মান করা এবং কৃতজ্ঞচিত্তে তার প্রতি বিনীত হওয়া; যিনি আমাদের জন্য এ খাবার সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘হে ওই সব মানুষ যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আহার করো আমার দেওয়া উত্তম রিজিক থেকে, অতঃপর কৃতজ্ঞতা আদায় করো মহান আল্লাহর; যদি তোমরা তাঁর ইবাদত করে থাকো’ (সুরা বাকারা : ১৭২)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মানব সম্প্রদায়! যদি তোমরা আমার শোকর আদায় করো তা হলে অবশ্যই আমি তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে জেনে রেখ-নিশ্চয় আমার আজাব অত্যন্ত কঠিন!’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)

অনেক সময় দেখা যায়, খাবারের টেবিলে বসে কেউ কেউ প্লেট ভরে খাবার নিচ্ছে কিন্তু কিছু অংশ খেয়ে বাকিটা নষ্ট করে রেখে দিচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমন অপ্রীতিকর চিত্র বেশি দেখা যায়। সাধারণ বাড়িঘর, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ছাত্রাবাসসহ এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে খাবার নষ্ট হচ্ছে না। অথচ যে মুহূর্তে খাবার নষ্ট করা হচ্ছে, ঠিক তখনই আশপাশে হয়তো কোনো ক্ষুধার্ত শিশু কিংবা বৃদ্ধ অথবা অসহায় নারী-পুরুষ খাবারের জন্য কষ্ট করছে। শুধু খাবার নয়, যেকোনো অপচয়ই ইসলামে শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো। কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)

অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে খাদ্যের বরকত উঠে যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) খাবার অপচয় থেকে বাঁচতে খাবারের সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়ার জন্য বলেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) খাওয়ার পর তাঁর তিনটি আঙুল চেটে নিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারও খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে, সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাদের তিনি থালাও চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে, তা তোমাদের জানা নেই। (তিরমিজি : ১৮০৩)

মহান আল্লাহর নেয়ামত খাবারেরও শোকর আদায়ের অনেক মাধ্যম আছে। কিন্তু যেটি আমরা সবসময় ভুলে থাকি তা হচ্ছে-পড়ে যাওয়া ভাত বা অন্য যেকোনো খাবারের পড়ে যাওয়া অংশ কুড়িয়ে খাই না। প্রিয় নবী (সা.) কত দরদমাখা কণ্ঠে উম্মতকে বলেছেন, ‘শোনো! শয়তান উপস্থিত হয় তোমাদের সব কাজে। এমনকি তোমাদের খাবারের সময়ও। তো তোমাদের কারও হাত থেকে যদি খাবারের কোনো টুকরো মাটিতে পড়ে যায়, তা হলে সে যেন ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয়। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। কারণ তোমরা জানো না, খাবারের কোন অংশে বরকত নিহিত রয়েছে।’ (মুসলিম : ২০৩৪)

খাদ্য আমাদের মধ্যে শরীরে শক্তি সঞ্চার করে। বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। খাদ্যের ছোট একটি কণাও যেন অপচয়ের শামিল না হয়। পড়ে গেলে খাবারের দানা কুড়িয়ে খেতে হবে। খাবার পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দস্তরখানা এবং মাটি সবই সমান। সব জায়গা থেকেই উঠিয়ে নিতে হবে। তবে মাটিতে পড়লে হয়তো কোনো ময়লা লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা ময়লা দূর করে খাব। যদি ময়লা দূর করা সম্ভব না হয় কিংবা কোনো নাপাকি লেগে যায়, তবে সেটি বিড়াল বা অন্য কোনো প্রাণীকে দিয়ে দেব। তারপরও নিচে যেন পড়ে না থাকে। কারণ এটি খাবারের অসম্মান, যা আল্লাহ তায়ালা সহ্য করেন না। আর যদি কোনো খাবারের টুকরো বা অংশ অনেক সময় ধরে মাটিতে পড়ে থাকে তবে সেটি না খাওয়া উচিত। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, কোনো খাবার মাটিতে অনেক সময় ধরে পড়ে থাকলে সেটিতে কিছু না কিছু জীবাণু সৃষ্টি হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের অনুপযোগী হতে পারে। তাই আমাদের উচিত খাবার পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই উঠিয়ে নেওয়া কিংবা অন্য প্রাণীকে দিয়ে দেওয়া!

মাটি থেকে খাবার কুড়িয়ে নেওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। প্রথমত নবী (সা.)-এর আদেশ মান্য হয়; যা আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার প্রথম ধাপ। দ্বিতীয়ত এতে বিনয়ের গুণ অর্জন হয়; অহংকার দূর হয়। অহংকার মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, অহংকার আমার চাদর, যে আমার চাদর ধরে টান দেবে আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব’ (আবু দাউদ : ৪০৯০)। 

তৃতীয়ত খাবারের প্রতি সম্মানবোধ জাগে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেব’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)। চতুর্থত খাবারের বরকত অর্জনের সুযোগ। কারণ আমরা জানি না খাবারের কোন অংশে বরকত নিহিত। যদি পড়ে যাওয়া অংশে বরকত থেকে থাকে, তা হলে তো কুড়িয়ে খাওয়ার দ্বারা বরকত লাভ করার সুযোগ হলো। পঞ্চমত নিজেদের মধ্যে অজান্তেই একটা মিতব্যয় ও অপচয় না করার অভ্যাস গড়ে উঠবে, একটি সফল জীবনযাপনের জন্য যা খুবই প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সঠিক বোঝার ও অপচয়হীন খাবার গ্রহণের তওফিক দিন।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close