ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সবুজ বেষ্টনীর মৃত্যু পরোয়ানা
কাটা হচ্ছে রক্তদহ বিলের ১১শ গাছ
প্রকাশ: সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ২:৪১ এএম  (ভিজিট : ৪৪৮)
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে ঐতিহাসিক রক্তদহ বিলসংলগ্ন সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে গাছ নিধন। এমনকি যে গাছগুলো চিহ্নিত করা হয়নি সেগুলোও কেটে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মমাফিক এসব গাছ কাটা হচ্ছে। 

এদিকে গাছ কাটা বন্ধের আশ্বাস দিয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন উত্তপ্ত আবহাওয়া চলছে। এ অবস্থায় কোনো গাছ কাটা যাবে না। আমি গাছ কাটা বন্ধ করে দেব।

রক্তদহ বিলে যাওয়ার একমাত্র সড়ক সান্দিড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে। এই সড়কের ধারে রয়েছে সারি সারি বনজ গাছ, যে গাছগুলো কেটে ফেলছে বন বিভাগ। কোনো গাছ কাটা হয়ে গেছে, আবার কোনোটি মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় জনগণসহ ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে। বিলের পাড় ও সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এসব গাছ একদিকে বাঁধের কাজ করছে, অন্যদিকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে প্রায় ২০ বছর ধরে। তাই এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন স্থানীয়রা। 

সরেজমিন দেখা যায়, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি সড়কের পাশে ও বিলপাড় দিয়ে লাগানো প্রায় ১১শ গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪শ-৫শ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এসব গাছের বেশিরভাগই বনজ গাছ।  

আদমদীঘি বন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০২-০৩ অর্থবছরে রোপণ করা হয় এই গাছগুলো। বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় রক্তদহ বিলসংলগ্ন সড়কের দুই পাশে মেহগনি, রেইনট্রি, ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, শিশুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। এগুলো থেকে ১১শ গাছ কাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বন বিভাগ বলছে, ২০ বছর পূর্ণ হলেই সামাজিক বনায়নের গাছ বিধি অনুযায়ী কাটার বিধান রয়েছে। সেই নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে নম্বর চিহ্নিত করে বিক্রি করার জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যথাক্রমে সহিদুল ইসলাম, আ. মান্নান ও রতন কুমার দেব গাছ কাটার কার্যাদেশ পান। 

স্থানীয় কৃষক আছর আলী বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটছে কাটুক। তবে দেখে-শুনে বেশি বয়সি ও মরা গাছ কাটুক। কিন্তু গণহারে সব গাছ কাটার বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না। এতে আমরা কৃষকরা নানামুখী অসুবিধার সম্মুখীন হব। গরমে গাছের ছায়ায় আমরা স্বস্তি পাই। গাছ কাটা শেষে আবার নতুন নতুন গাছ লাগানর জন্য বন বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান এই কৃষক।

সান্দিড়া গ্রামের জেলে কাদের আলী বলেন, এখানে সরকারি সব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে গাছগুলো কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়নি সেগুলোও কাটা হচ্ছে। কিন্তু এর পরিবর্তে নতুন করে কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। আদৌ এখানে কোনো গাছ লাগানো হবে কি না তার ঠিক নেই। এই গাছগুলো কাটায় আমাদের সবারই অসুবিধা হচ্ছে। এই বিল ও বিলের আশপাশে শত শত কৃষক ও জেলে প্রতিদিন কাজ করেন। কাজের ফাঁকে তারা এই সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় এসে একটু জিরিয়ে নেন। গাছ কাটার কারণে এখন সবসময় রোদের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। 

স্থানীয় শিক্ষার্থী তাহমিদ নাফিস দীপ্ত বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আমাদের সবারই জানা। উপজেলার সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে সান্তাহারের এই রক্তদহ বিলপাড় অন্যতম। তীব্র গরমেও এখানে গাছের ছায়ায় শীতল বাতাস পাওয়া যায়। গাছের সামনেই আছে অথই পানি। সড়ক ও বিলপাড়ের গাছের কারণে এখানকার সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া এই গাছগুলো বিলপাড়ের মাটি ধরে রাখার কাজও করে। সব গাছ কেটে ফেলে এই সৌন্দর্য নষ্ট করছে বন বিভাগ।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close