ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফসলের মাঠে সোনালি ধান, তবুও দুশ্চিন্তায় কৃষক
প্রকাশ: রবিবার, ৫ মে, ২০২৪, ৭:১৪ পিএম  (ভিজিট : ৮০২)
 সোনালি বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মৌসুম একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। ছবিগুলো গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: সময়ের আলো

সোনালি বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মৌসুম একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। ছবিগুলো গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: সময়ের আলো

উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় ফসলের মাঠের ধান পাকতে শুরু করেছে, আর ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে উজানের বৃষ্টিতে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার বাড়তি ভয়। তাই এ অঞ্চলে ক্ষেত আলো করে থাকা সোনালি বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মৌসুম একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। জেলার সাত উপজেলায় বেশিরভাগ ফসলের মাঠ পাকা ধানের গন্ধে মেতে উঠেছে। কিছু কিছু ধান ক্ষেতে কৃষকের সীমাহীন ব্যস্ততা। কেউ পাকা ধান কাটছেন, কেউবা মাড়াইয়ে ব্যস্ত। চাষি পরিবারের ছোট-বড় অনেকে মিলে সেই ধান ঘরে তুলছেন। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহ আর প্রায় সব এলাকায় একই সময় ধান পেকে যাওয়ায় চাষিরা পড়েছেন শ্রমিক সংকটে। আর এই সংকট সামলাতে কৃষককে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ।

কৃষিবিদরা বলছেন, গাইবান্ধা দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি নির্ভর জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ জেলায় চাষিরা অন্যান্য ফসল আবাদের পাশাপাশি ধানের আবাদ বেশি করে থাকেন। বিশেষ করে ইরি-বোরো ধান এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থ যোগানের পাশাপাশি ভাতের যোগান দিয়ে প্রধান ফসলের জায়গা করে নিয়েছে। সে কারণেই বোরো আবাদে বাড়তি উদ্যোগ ও মনঃসংযোগ থাকে চাষিদের। জেলা জুড়ে সপ্তাহ খানেক আগেও ফসলের মাঠ সবুজ থাকলেও এখন ধানের শীষে সোনালী রং ধরতে শুরু করেছে। সেই সোনালী ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু না হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল বাঁচাতে তা নিরাপদে ঘরে তুলতে চান তারা। যদিও এ অঞ্চলে মৌসুমের শুরু থেকে এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।

" align=


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ১০৫ হেক্টর, ফুলছড়িতে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং সাঘাটা উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হয়েছে ইরি-বোরো ধান চাষ।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের কৃষক আরিফুর রহমান বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। ধানে রং চড়েছে। আর ১০ দিন পর ধান কাটতে হবে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কৃষি-শ্রমিকেরা ধান কাটতে গড়িমসি করছেন। আবার কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি।

সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ী গ্রামের কৃষক আল-আমিন বলেন, গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ পড়েছিলো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এ বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগছে। সব কিছুর দাম বাড়ার সাথে সাথে ধান কাটাতে কৃষি-শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। এতে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ছে।

সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম এবার প্রায় সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। দুই-তৃতীয়াংশ জমির ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহ পর থেকে এসব ধান কাটা শুরু করতে হবে তাকে। প্রতিবছর স্থানীয় শ্রমিকরাই ক্ষেত থেকে ধান কেটে ঘরে তোলেন। কিন্তু এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এবার শ্রমিকেরা দিনের বেলা ধান কাটতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা চুক্তি নিয়ে ভোরে কিংবা বিকেলে যখন সূর্যের তাপ কম থাকে তখন মাঠে ধান কাটছেন। এতে একদিকে যেমন ধান কাটতে সময় লাগছে বেশি। অন্যদিকে আবহাওয়া অনুকূলে পাওয়া যাবে কিনা এ ভাবনায় ক্ষেতের পাকা ধান নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তার।

" align=


কৃষক সংগঠনের নেতারা বলছেন, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি-শ্রমিক মিলছে কম, অন্যদিকে মজুরি দিতে হচ্ছে অনেক বেশি। ধান চাষে সার, তেল, কীটনাশকসহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না তাদের। ধান আবাদে লোকসান গুনছেন চাষিরা। ধানের ন্যায্য দাম নির্ধারণ এবং হাটে-হাটে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি কৃষকের।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এ জন্য জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ধান পাকতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। তাপপ্রবাহের কারণে ধান কাটার শ্রমিকের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তির কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিনে ধান কাটতে কৃষকদের উৎসাহিত করছি।

সোনালি বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মৌসুম একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। ছবিগুলো গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: সময়ের আলো

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  বোরো ধানের বাম্পার ফলন   ধান কাটার মৌসুম   গাইবান্ধা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close