ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দ্রুত ক্লাসে ফেরার দাবি
প্রশাসনের বলি কুবি শিক্ষার্থীরা, সেশন জটের শঙ্কা
প্রকাশ: রবিবার, ৫ মে, ২০২৪, ৫:০৩ পিএম  (ভিজিট : ৫৬০)
উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্ধে অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনের দেয়া বন্ধ কবে নাগাদ শেষ হয় জানেন না কেউই। এতে দীর্ঘ সেশন জটের আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার।

জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর উপাচার্যের সাক্ষাৎ করতে গিয়ে কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সাথে হট্টগোলে জড়ায় শিক্ষক সমিতি। এরপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে বহিষ্কার, প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকীকে অপসারণসহ ৭ দফা দাবি জানান শিক্ষক সমিতি। ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষক সমিতির সাথে উপাচার্যের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দাবি মেনে না নেয়ায় তিন দফায় ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা ১৩ ও ১৪ মার্চ প্রথম দফায়, ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ দ্বিতীয় দফায় এবং ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফায় শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে। একই সাথে ২৩ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পুনরায় ৭ দফা দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিলে উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, ট্রেজারার ড. মো. আসাদুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দপ্তরে তালা দেন।

সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্য ও শিক্ষকদের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাদের মাঝে প্রকাশ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এরপর দুপক্ষই পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মঙ্গলবার রাতে সিন্ডিকেটের ৯৩ জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অচলাবস্থা সৃষ্টিতে সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক ও প্রশাসনের বিরোধে বারবার শিক্ষার্থীদের বলি হতে হচ্ছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে বারবার ক্লাস বন্ধ রাখছে। মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন বারবার পেছানো হচ্ছে। এতে সেমিস্টার ফাইনালও পিছেয়ে যাচ্ছে। দিনশেষে শিক্ষার্থীরাই সেশনজটে পড়বে। ক্যারিয়ার নষ্ট হবে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এই দায়ভার তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন পিছিয়ে যায়। সেই সাথে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়। এছাড়াও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, বাংলা বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, লোকপ্রশাসনসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ঘোষণায় পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শাহনেওয়াজ উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে আমরা একাডেমিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন আবার শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে না। ঈদের পর আমাদের স্নাতকোত্তর ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু ঈদের আগেও ক্লাস বয়কটের কারণে ক্লাস হয়নি, ঈদের পর এসেও ক্লাস হচ্ছে না। তাতে আমাদের কোর্সও শেষ হচ্ছে না, পরীক্ষায় বসতে পারছি না। আমাদের বয়সতো থেমে নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক ও প্রশাসনের দ্বন্দ্বের প্রভাব কেনো শিক্ষার্থীদের উপর পড়বে? আমরা এখানে বলির পাঠা হতে আসি নাই। শিক্ষকরা আমাদের সুন্দর একটা ক্যারিয়ার উপহার দিবে। কিন্তু তারাই আমাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করছে। 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা ক্লাসে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্য ও তার ক্যাডার বাহিনী শিক্ষকদের উপর যেই হামলা চালিয়েছে তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তাই সকল শিক্ষক ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গিয়েছে। 

কতদিন এমন অচলাবস্থা চলতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন উচ্চপর্যায়ে চলে গিয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকার বসে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো সমাধানে আসবে। আশা করি দুই-তিন মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও এখন সংকটপূর্ণ সময় চলছে, ক্লাস শুরু হলে আমরা শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে সেগুলো পুষিয়ে দিবো।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা কোন সমস্যার সমাধান নয়। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে দ্রুততম সময় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়াটা সকল পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন: এদিকে দ্রুত সময়ে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে গত ৪ এপ্রিল মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে আল্টিমেটাম দেন। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  কুবিতে অচলাবস্থা   শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন   




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close