ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সবুজ পাহাড়ে মরুভূমির কষ্ট
প্রকাশ: শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ৩:১৮ এএম  (ভিজিট : ৫১৮)
নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলার বেশির এলাকায় গারো পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে গড়ে উঠেছে জনপদ। তবে প্রকৃতির কোলে বসবাস করা এসব এলাকার বাসিন্দারা এখন দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন বিশুদ্ধ পানির অভাবে। অনিন্দ্য সুন্দর সবুজে বসবাস করা মানুষগুলোর পানি সংগ্রহের সংগ্রাম অনেক ক্ষেত্রে মরুভূমিকেও হার মানিয়েছে। পাহাড়ের প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলছে হাহাকার। ফলে বাধ্য হয়ে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কুয়া, ঝরনা বা ছড়ার ময়লাযুক্ত পানিই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। তবে শুষ্ক মৌসুমে এসব উৎসের পানিতেও টান পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই উপজেলার পাহাড়ি জনপদে লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। ভৌগোলিক কারণে এই এলাকায় মাটির নিচে চিনা মাটি ও পাথরের সংখ্যা অনেক বেশি। পাথর সরিয়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট নিচে গেলে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা অনেক ব্যবয়বহুল। পাহাড়ে বসবাস করা দিন আনে দিন খায় এমন হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো কঠিন। এদিকে ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হাতেগোনা কিছু সামর্থ্যবানদের বসানো সাবমারসিবল পাম্পেও মিলছে না পানি। এতে সংকটের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে সর্বত্রই। 

অপরদিকে পুরো বছর পাহাড়িরা পানির জন্য কূপ, ঝরনা ও ছড়ার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় প্রায় শুকিয়ে গেছে এসব উৎসও। এতে তাদের হাহাকার বেড়েছে অবর্ণনীয় পর্যায়ে। 

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে গভীর টিউবওয়েল বসাতে হলে পাথর সরিয়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট নিচ পর্যন্ত যেতে হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল। এত খরচ এখানকার মানুষের পক্ষে জোগানো কষ্টসাধ্য। তবে বিকল্প হিসেবে গভীর রিং টিউবওয়েল বসান হলে এখানকার জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে।

দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা ও বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির সাবেক পরিচালক স্বরদিন্দু স্বপন হাজং বলেন, পাহাড় ও টিলায় বসবাসরত মানুষ প্রকৃতির নিয়মে ঝরনা, ছড়া ও গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে মনে করি আমি।

সরেজমিন দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, বারমারী, ভরতপুর, গাজিকোনা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানির সমস্যা চলছে। এসব গ্রামের বাসিন্দারা বাধ্য হয়েই পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করছে। আর এতে পেটের অসুখ, চর্ম রোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। চাকের রিং বসিয়ে কিংবা অগভীর কুয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করে তারা। কিন্তু দীর্ঘ তাপপ্রবাহের প্রভাবে পানির সংকট বেড়ে গেছে। চাকের রিং কিংবা অগভীর কুয়াতেও পানি মিলছে না। কয়েকটিতে সামান্য পরিমাণে পানি থাকলেও তা খাওয়ার অনুপযোগী।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের জন্য গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তারপরও এসব এলাকায় পানি সংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই পানির সংকট দূর করতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করব। 

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, শুকনো মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে একই ধরনের পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায় কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোবিন্দপুর, সন্ন্যাসীপাড়া, পাঁচগাঁও, খারনৈসহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও। এসব গ্রামে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর তারা মাটিতে গর্ত করে কুয়া তৈরি করে সেখানে জমানো পানি সংগ্রহ করে পান করে থাকে। অনেকে আবার পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট ছড়া (খাল) থেকে প্রবাহিত পানি সংগ্রহ করে। আবার অনেকেই ছড়ার পাশে বালুর মধ্যে গর্ত করে জমানো পানি সংগ্রহ করে। পরে সেই পানি ব্যবহার করে রান্না, গোসল, খাবারসহ বিভিন্ন কাজে। এই অঞ্চলের পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেকে বিশেষ পদ্ধতিতে আয়রনযুক্ত পানি বালুর মধ্যে ছেঁকে খাবার পানি সংগ্রহ করে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close