ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তীব্র তাপদাহে ক্ষতির মুখে পোলট্রি খামারিরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ১০:৫০ এএম  (ভিজিট : ৭৩৬)
প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। ডিম ও মাংসের উৎপাদনও কমেছে ১৫ থেকে ৩৫ ভাগ। ঘরের চালে ঝরনা ও বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেও মুরগি সুস্থ রাখতে পারছেন না খামারিরা। এতে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দেও মাসব্যাপী চলছে তীব্র তাপদাহ। এই অসহনীয় গরমে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ। ইতোমধ্যে হিটস্ট্রোকে গোয়ালন্দে একজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই তাপদাহ থেকে রেহাই পাচ্ছে না অন্যান্য জীবজন্তুও। হিটস্ট্রোকের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন পোলট্রি খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পোলট্রি হ্যাচারির মালিক ও প্রান্তিক খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে ডিম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ও মুরগির মাংস উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পোলট্রি হ্যাচারি ও খামার ঘুরে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে হিটস্ট্রোক করে প্রতিদিনই মরছে খামারের মুরগি। খামারিরা মুরগি সুস্থ রাখতে ঘরের চালে মোটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর পাশাপাশি বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া তাপ সহিষ্ণু করতে মুরগিকে খাওয়ানো হচ্ছে ভিটামিন সি জাতীয় নানা ওষুধ। এতে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা। এর পরও তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগিও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এভাবে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মুরগি।

পোলট্রি শিল্পে দ্বিতীয় বৃহত্তম জোন হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দকে। এ উপজেলায় অন্তত অর্ধশত পোলট্রি হ্যাচারির পাশাপাশি অসংখ্য পোলট্রি খামার রয়েছে। নানা কারণে পোলট্রি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। ক্ষতির কারণে শত শত মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালি পোলট্রি হ্যাচারি লিমিটেডের পরিচালক আইয়ুব রানা জানান, তীব্র গরমের কারণে বাচ্চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যেসব মুরগির ১৮ সপ্তাহে উৎপাদনে যাওয়ার কথা, তারা ২৪ সপ্তাহেও উৎপাদনে যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে মুরগির পেছনে খরচ হয় ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও মুরগির মৃত্যু বন্ধ করা যাচ্ছে না।

উপজেলার উজানচর নতুন পাড়া এলাকার খামারি শাহনি শেখের খামারে সোনালি জাতের মুরগি আছে আড়াই হাজারের মতো। হিটস্ট্রোকে প্রতিদিন তার ১০ থেকে ১৫টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, মুরগির জন্য আলাদাভাবে বাতাসের ব্যবস্থা ও শেডের চালের ওপরে সারাদিন ঝরনা বসিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। গরমে মুরগির ওজনও কমে যাচ্ছে।

ছোট ভাকলা ইউনিয়নের খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, তার এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগি আছে। গত এক মাসে প্রায় ৫০টির মতো মুরগি মারা গেছে। এসব মুরগিকে বেশি শীতল জায়গায় রাখা যায় না, আবার বেশি গরমেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমের কারণে মুরগিকে সুস্থ রাখতে এক বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। মুরগির খাবার কমিয়ে দিলে উৎপাদন কমে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিদ্দিক মিয়া বলেন, তীব্র তাপদাহে খামারের মুরগির ওজন ও ডিম উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ৪০ দিনে একটি বয়লার মুরগি দুই কেজি ওজন ছাড়িয়ে যায়। এখন তা ১ কেজিও হচ্ছে না। আবার একই কারণে খামারিরা নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না, এতে বাচ্চার দাম কমে গেছে। কিন্তু হ্যাচারি মালিকদের ব্যয় আরও বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা একেবারে পথে বসে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান মিয়া জানান, তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় পোলট্রি খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণ ক্ষমতার মধ্যে কম মুরগি রাখা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, শেডের চালে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা এবং নিয়মিত পানি ঢালা ও দুপুরে মুরগিকে খাবার না খাওয়ানো ইত্যাদি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  তীব্র তাপদাহ   হিটস্ট্রোকে মুরগির মৃত্যু   পোলট্রি খামারিদের ক্ষতি   গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close