ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নারী শ্রমিকের আক্ষেপ
‘আমি পুরুষ হলে বেশি মজুরি পেতাম’
প্রকাশ: বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ২:৩৩ পিএম  (ভিজিট : ৬৬২)
‘শীত হোক আর মাথা ফাটানো রোদ হোক সকাল ৮টায় নোনা পানিতে নামি আর দুপুর ১টায় উঠি। এরপর হাজিরার ২০০ টাকা নিয়ে ৩ মাইল হেঁটে বাড়ি যাই। আবার বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ করতি হয়। আমাগের কোনো অসুখবিসুখ নেই। ভোরে আযান দেয়ার সময় ঘুম থেকে উঠি। সংসারের কাজ করে ৭টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ ঘণ্টার পথ পায়ে হেঁটে যাই। মাঝে মাঝে মনে হয়, পুরুষ হলে ভালো হতো। আমি ৫ ঘণ্টায় পানিতে নেমে পাই ২০০ টাকা আর ওই কাজে পুরুষেরা পায় ৩৫০ টাকা। কিন্তু কি করব সবই নিয়তির খেলা।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের শেওড়া গ্রামের পূর্ণিমা রানী মণ্ডল। এই গ্রামে প্রায় দেড়শো পরিবার রয়েছে। 

এখানকার প্রতিটি পরিবারের নারী এবং পুরুষেরা সারা বছর অন্যের ঘের বা জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ছেলে একটু বড় হলেই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাকেও কাজে নেয় বেশি আয়ের আশায়। কারণ এসব এলাকায় নারী শ্রমিকের থেকে পুরুষ শ্রমিকের শ্রমের দাম বেশি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৪০ হাজার ৫০০ পরিবার রয়েছে। আর লোকসংখ্যা রয়েছে ৩ লক্ষাধিক। এ উপজেলার ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। উপজেলাটি কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া এবং কয়রা নদী দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ ঘেরে শ্রম বিক্রি করে। এছাড়া অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করা, নদীতে বা সমুদ্রে মাছ ধরা এবং সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।

শুধু উপজেলা পর্যায়ে নয়। বিভাগীয় শহরেও নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য রয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) খুলনার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই রোদের মধ্যে খুলনা মহানগরীর খান জাহান আলী সড়কের পাশে ভবন নির্মাণে কাজ করছিলেন কুলসুম বেগম। বয়স ৫৫। থাকেন নগরীর টুটপাড়া এলাকায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে রাজমিস্ত্রির সহকারী বা হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। মেয়েরা এখন অন্যের ঘরে চলে গেছে। কিন্তু সেই পেশা এখনও ছাড়েননি কুলসুম। দীর্ঘ ৩০ বছরের এই কর্মজীবনে তার একটাই আপসোস মজুরি বৈষম্য। 

তিনি জানান, আমি যখন প্রথম কাজ শুরু করি। তখন প্রত্যেকদিন পেতাম ২০০ টাকা। আর সেই সময় পুরুষেরা পেত সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন আমি মহিলা বলে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে পাই ৫০০ টাকা। আর ওই একই কাজে পুরুষেরা পায় ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা। এটা শুধু আমি একা না। খুলনার সব মহিলা শ্রমিকেরাই এইরকম দৈনিক বেতন পায়।

খুলনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনা হেনা জানান, আজও নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একই কাজে নারীরা যা পায় পুরুষেরা তার প্রায় দ্বিগুণ পায়। এ সমস্যা নিরসনে নারীদেরকে সচেতন হতে হবে। সম মজুরি যেন পায়, সেজন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া সরকারের প্রত্যেকটি দপ্তর থেকে নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেয়ার সময় সম মজুরি নিশ্চিত করতে চাপ দিতে হবে। এরইমধ্যে সরকার নারীদেরকে স্বাবলম্বী করতে অনেক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  মহান মে দিবস   নারী শ্রমিকের আক্ষেপ   খুলনা   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close