আসন্ন উপজেলার ৬ষ্ঠ নির্বাচনে এবারে বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী তার সমর্থকদের হুমকি ও নির্বাচনে কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করায় এবং দলীয়ভাবে কোন সমর্থক না পাওয়া আপাতত নির্বাচন প্রচার-প্রচারণা স্থগিত ঘোষণা করেছেন বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর। তিনি এবারে আনারস মার্কা প্রতীক পেয়েছেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তা এসব মন্তব্য করেন এই নেতা। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে সাধারণ জনমনের বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ভিডিও বার্তা তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিক দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান চাপে আমি মানসিক দিশেহারা। কখন কি ঘটে যায়, এটি অনুমান করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত যেভাবে আমাকে এবং আমার কর্মী সমর্থকদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের আদর্শ কর্মী হিসেবে আমার জন্য জনগণের ক্ষয়ক্ষতি, কারো জীবন বিন্যাস হোক এই শঙ্কাকে সামনে রেখে এমন নির্বাচন আমার দরকার নেই।
তিনি আরও বলেন, সার্বিক বিবেচনায় বান্দরবানে সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে আমি যাতে প্রচার প্রচারণা না করি, আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে অন্যান্য কর্নার থেকে বলা হচ্ছে।
নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষ তিনি বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি মাননীয় সংসদের সমর্থিত এই পরিচয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় জেলা ও উপজেলার কতিপয় নেতাসহ যারা ইউপি চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকেও ব্যবহার করে আমাকে ঠেকাও এই পদ্ধতিতে তারা কাজ করছেন। এই বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এটি যদি হয়, ৭ম বারের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ আমার প্রিয় নেতা বীর বাহাদুর তিনি যদি ভেবে থাকেন, তাহলে আমার মতে এই নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানো শ্রেয়।
দলীয় নেতাদের ক্ষোভ টেনে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে একক প্রার্থী আমি। এটি অস্পষ্ট করার পরও নেতাকর্মীদের নিষেধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে নির্বাচনী মাঠে আমার সাথে কাজ না করার জন্য। সারাদেশের ন্যায় আগামী ৮ মে বান্দরবানে ৪টি উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে, তারমধ্যে বিভিন্ন কারণে ৩টি উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে ৩টি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী টিম করে তাদের প্রচার-প্রচারণায় কর্মরত আছেন। যা প্রতিনিয়ত ফেসবুকে আপলোড হচ্ছে, আমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু দলীয়ভাবে কোন সাড়া না পাওয়া এই নির্বাচন না করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।
শেষে তিনি বলেন, শক্ত অবস্থান থেকে আমি আমার কথাগুলি ব্যর্থহীনভাবে সকলের উদ্দেশ্যে জানানোর জন্য বলছি। কারণ অনেকগুলো বিষয় আছে, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। বিশ্লেষণ হবে পরে, রক্ষা করবো মাঠে আমার সমর্থন নেতাকর্মীদের। এই বাস্তবতায় এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীরা তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে যারা বিএনপির প্রার্থীদের সাপোর্ট দিচ্ছে, তারা আসলেই দলীয় কর্মী নয়। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আদর্শ সৈনিক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্মী হিসেবে থাকবো এই দৃঢ় ব্যক্ত প্রত্যয় করছি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একে এম জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিষয়ে ব্যাপারে দলের কাউকে জানায়নি। আর দলীয়ভাবে প্রার্থীর হিসেবে রিজুলেশনে স্বীকৃতি দিয়েছি। এখন সে দাঁড়াবে কি-না বা থাকবে কি-না এই ব্যাপারে আমাদের কাছে খবর আসেনি।
একেএম জাহাঙ্গীর দলের সমর্থন না পাওয়ার প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম চৌধুরী বলেন, তিনি যদি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে আর সবার সঙ্গে যদি আলোচনা না করে নিজেই একা একা সিন্ধান্ত নিলে তাহলে দলের পক্ষ থেকে গায়ে পড়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তারপরও দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যা যা করার প্রয়োজন সেটি আমরা করব।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ বলেন, নির্বাচনী মাঠে জনসমর্থন না পেয়ে প্রচার-প্রচারণা থেকে বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী একে এম জাহাঙ্গীর।
প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ালে দলের কোন পড়বে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও এতে দলের কোন প্রভাব পড়বে না। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে তার নির্বাচনের পোষ্টার বিভিন্ন স্থানে গ্রাম-গঞ্জে ও শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে বিরূপ সৃষ্টি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মোটরসাইকেল প্রতীক প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি গত পরিষদের আগের টানা ৪ বারের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনারস মার্কা প্রতীক নিয়ে লড়বেন একে এম জাহাঙ্গীর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীক দিয়ে যিনি লড়বেন আবদুল কুদ্দুস। গতবারেও উপজেলা নির্বাচনে দুই প্রাপ্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রার্থী একে এম জাহাঙ্গীর।
সময়ের আলো/আরআই