প্রতিদিনই তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙছে যশোরে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১৮ মার্চ রাজশাহীতে ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তারপর আজকের ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই সাম্প্রতিক সময়ে এটাই দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড জানিয়েছে যশোর বিমান বন্দর আবহাওয়া অফিস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। আগামী দিন গুলোয় সারাদেশে আরও তাপমাত্রা বাড়তে পারে। সোমবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবদাহের কারণে স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে দিনের উষ্ণতম সময়ে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে খরতাপে মারাত্মক ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
এদিকে তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে যশোরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মাছের রেণু পোনার উৎপাদন। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার দিনমজুর শ্রমিক রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকের চালক। তীব্র তাপদাহের কারণে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এবং নওয়াপাড়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বৈশাখের তপ্ত গরমে বিপর্যস্ত যশোর। চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আজ এই জেলায় রেকর্ড ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠার দিন সড়ক-মহাসড়কের বিটুমিন (পিচ) গলে যেতে দেখা গেছে। গরমে পিচ গলে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। এর আগে শনিবারে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে, তীব্র গরমে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহে সবজি জাতীয় ফসলের আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। আম, কাঁঠাল, লিচু এবং ড্রাগন ফলের ফুল-ফল ঝরে যাচ্ছে। তীব্র পানি সংকট বিরাজ করছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে যশোরসহ গোটা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পানি সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব জেলার অধিকাংশ অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। ডিপ টিউবওয়েল ও সাব মার্সিবলে পানি ওঠার মাত্রাও কমে গেছে বহুগুণে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছেন, বৈশাখের শুরু থেকেই সারাদেশে তাপদাহ শুরু হয়। এখন গরম তীব্র থেকে অতি-তীব্র আকার ধারণ করছে। গত বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দুপুর ২টায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, যশোর-নড়াইল, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে তাপপ্রবাহের কারণে বিটুমিন গলে যাওয়ায় সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।
বিসিক ঝুমঝুমপুর এলাকা ব্যবসায়ী কাউসার আলী জানান, রাস্তায় হাঁটতে গেলে জুতো স্যান্ডেল পিচে আটকে যাচ্ছে। দু’একজন পিচ থেকে তুলতে না পেরে স্যান্ডেল রেখেই চলে যাচ্ছেন। গাড়ির চাকার চাপায় তা রাস্তার পিচের সঙ্গেই আটকে থাকছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, যশোর-নড়াইল ও যশোর-খুলনা সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে, প্রচণ্ড গরমে সেসব জায়গা গলে যাচ্ছে। এজন্য সড়কের গলে যাওয়া স্থানে বালি ও নুড়ি পাথর দেওয়া হচ্ছে। যাতে গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় থাকে।
চলতি মৌসুমে টানা ১৮ দিন ধরে যশোরের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে। কখনও তীব্র আবার কখনও খুব তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। এতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য নেই। দিনের আলো ফোটার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিবেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হচ্ছে রোদের উত্তাপ। আবার সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তীব্র হচ্ছে গরমের অনুভূতি। বৃষ্টির পানির জন্য হাহাকার করছে মানুষ।
সময়ের আলো/আরআই