ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তাপদাহে শ্যামনগরের চিংড়ি ঘেরে মড়ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ২:২৬ পিএম  (ভিজিট : ৩৯০)
চলমান প্রচণ্ড তাপদাহে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। মৌসুমের মাঝে মাঝে সময় এসে গরমে হঠাৎ করে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরে যাওয়ায় মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়ি চাষিরা।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রচণ্ড তাপদাহে ঘেরে পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে যাচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাগদা ও ১১০ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে বাগদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩২৮ ও গলদা চাষের ঘের আছে ১ হাজার ৪১০টি।

উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া এলাকার চিংড়ি চাষি মাহাবুব আলম জানান, বছরের শুরুতে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়া হয়। দুই সপ্তাহ আগে থেকে ঘেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। আর যেসব জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর শরীরও দুর্বল। প্রচণ্ড গরমের কারণে মাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক সন্তোষ মণ্ডল ও একই এলাকার জয়ন্ত মণ্ডল জানান, তারা ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। ঘের প্রস্তুত সহ মাছ ছাড়ার জন্য তারা ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা লোণ করেছেন। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে লোণ পরিশোধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঘেরের মাছ মরার কারণে এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকারও মাছ বিক্রি হয়নি।

উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী এলাকার চিংড়ি চাষি ইব্রাহিম খলিল জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ঘের করছেন। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। ঘেরে ৪৫ হাজার বাগদার পোনা ছেড়েছিলেন। এখন প্রতিটি ৪০ গ্রাম করে ওজন হয়েছে। কিন্তু তীব্র এই গরমে পানি বিষিয়ে ওঠার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তার ঘেরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত পরিচর্যাও করা হয়। তবে রৌদ্রের কারণে কোনো হিসাব নিকাশ মিলছে না।

একই এলাকার চিংড়ি চাষি রাজু আহমেদ বলেন, তিনি এবার নিজের এবং অন্যের জমি ইজারা নিয়ে সবমিলে ২০০ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রথম কোটায় অবমুক্ত করা বাগদা মাছ মরে গেছে। এতে তার তিন লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার এলাকার ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানি নেই বলে জানান তিনি। তার উপর প্রচণ্ড রৌদ্রের কারণে ঘেরের পানি লালচে হয়ে উঠছে। যে কারণে প্রতিদিন ঘেরে মরা মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়াও উপকূলীয় এলাকার কয়েকজন চিংড়ি চাষি জানান, এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কোনো চিংড়ি ঘেরে গিয়ে কি কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা তাদের কি করা উচিত সে বিষয়ে কেউ পরামর্শ দেয়নি। তাই তাদের একমাত্র জীবিকা চিংড়ি চাষ নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর শ্যামনগরে চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ টন। তবে চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিংড়ির আড়তদাররা জানান, এবার মাছ মরে যাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। এজন্য বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। তবে এবার প্রচণ্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করেনি। জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করার দরকার তাও ঠিকমতো করেনি।

তবে এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে মৎস্য চাষিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় ঘেরের মাটি কেটে গভীরতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ঘেরে পর্যাপ্ত পানিও থাকা দরকার। একই সাথে আয়তন অনুযায়ী পরিমাণ মতো চিংড়ি পোনা অবমুক্ত করতে হবে। পানির পিপিটি ঠিক রেখে নিয়মিত পরিচর্যা করলে আশনারূপ ফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close