চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে নওগাঁর ধামইরহাটের জনজীবন। তীব্র গরমের প্রভাবে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ১৬ মাসের শিশু আমিনার মা রোকসানা বেগম বলেন, চার দিন ধরে ডায়রিয়া এবং বমির উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান মেয়েকে। ডাক্তারদের নিবিড় পরিচর্যায় কিছুটা সুস্থ হলেও ডায়রিয়া ও বমির কারণে শিশুর শরীর ভীষণ দুর্বল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ শিশুর অবস্থাই আমিনার মতো। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে মা-বাবারা হাসপাতালে ছুটে আসছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। বাদ যাননি ৩৫-৬০ বছর বয়সি নারী-পুরুষরাও। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও শয্যা সংকটে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শিশুসহ অনেক রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডাক্তার স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ চলছে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো। ঘর থেকে বের হলে টুপি পড়তে হবে। ঘন ঘন গোসল ও নিয়মিত ঠান্ডা পানি পান করাসহ অতিরিক্ত ঘাম বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে পরিমাণমতো স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাসপাতালের মেডিসিনসহ সব বিভাগে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৮ হাজার ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ১১২ জন, পুরুষ ২৬৪ জন এবং নারী ৪৩২ জন। অধিকাংশ রোগীই ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, শারীরিক দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ৫০। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ১৫টি বেড যোগ করা হয়েছে। বাকি রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে ১০০ জন রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে কনসালট্যান্টসহ ২৭ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে চারজন চিকিৎসক নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে চিকিৎসকসহ অভিজ্ঞ জনবল সংকট, অন্যদিকে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
দক্ষিণ চকযদু পৌরসভা এলাকার চান মিয়া বলেন, আমার বয়স প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই করছে। দীর্ঘদিন ধরে হাই প্রেসার আর হার্টের সমস্যা। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। অসুখ পিছু ছাড়ছেই না।
সময়ের আলো/জেডআই