ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গাইবান্ধায় গরমে মরছে গবাদিপশু, ক্ষতিতে প্রান্তিক খামারিরা
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৮:০০ পিএম  (ভিজিট : ৪০৮)
সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গতকাল (রোববার) চতুর্থ দফায় হিট অ্যালার্ট বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার মেয়াদ আরও ৭২ ঘণ্টা বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে প্রথমবার তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। এরপর কয়েক ধাপে তা বাড়ানো হয়। আর এই গরমে মানুষের পাশাপাশি কৃষকের গবাদিপশুসহ খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তীব্র গরমে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে এসব পশুদের। উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় গত কয়েকদিনে হিট স্ট্রোকে অন্তত ১২টি গরু মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

তীব্র দাবদাহে গরু নিয়ে বিপাকে খামারিরা বলছেন, অত্যধিক গরমে দুধের উৎপাদন কমেছে। কোরবানি সামনে রেখে যারা গরু পালন করছেন তারাও চরম শঙ্কায়। লালন পালনের খরচ বেড়েছে। পশুর ঘর ঠাণ্ডা রাখতে চালে পানি ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না খামারিদের। অসুস্থ পশুগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশি জাতের গরু। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তার দাবি খামারিদের।

তবে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় দানাদারের চেয়ে বেশি ঘাস জাতীয় খাবার খাওয়ানোসহ নানা পরামর্শের কথা বলছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। খামারিদের সহায়তায় মোবাইল ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে বলেও দাবি তাদের। কৃষক ও খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

তাপপ্রবাহের কারণে গত সাতদিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের উত্তর আনালেরতারি গ্রামের প্রতাপ ঘোষের ৪টি বিদেশি জাতের গরু মারা গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে খামারের বাকী গরুগুলোও। খামারে একাধিক ফ্যান লাগিয়ে, চালে পানি দিয়ে ভিজিয়েও তেমন কাজ হচ্ছে না।

একই অবস্থা গাইবান্ধা সদরের উত্তর গিদারী গাছের ভিটা গ্রামের খামারি জোহা মিয়ার খামারে। গত চার দিনে হিট স্ট্রোকে তার ৬টি গরু মারা গেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শও কাজে আসছে না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালি ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি গ্রামের খামারি আবু তালেব বলেন, তীব্র গরমের কারণে শনিবার থেকে আমার একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু খাওয়া বন্ধ করে। চিকিৎসা করেছি কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় গতকাল (রোববার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গরুটি মারা যায়। যার আনুমানিক মূল্যই ৮০/ ৮৫ হাজার টাকা। আমার খামারে থাকা অন্য তিনটি গরু এখন পর্যন্ত সুস্থ রয়েছে।

একই গ্রামের গৃহিণী শাহিদা বেগম বলেন, আমার খামারে সবগুলো দেশি গরু হওয়ায় কোনটি এখনও অসুস্থ হয়নি।

এছাড়া সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের আনা মিয়া, ফুল মিয়া ও নুরুজ্জামান মিয়ার ১টি করে গরু মারা গেছে।

খামারিরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পশুকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত পানি, স্যালাইন ও খাবার। গোসল করাতে হচ্ছে কয়েকবার। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শ্রমিক লাগছে। তাই বাড়ছে লালন-পালনের খরচ। এমন অবস্থায় আসছে কোরবানিতে বড় লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা। অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে একটি গরুর ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যেত, এখন ১৮ থেকে ২০ লিটারের বেশি মিলছে না।

অন্যদিকে জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় হিট স্ট্রোকে শতাধিক মুরগির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে কমে আসছে মুরগির খাদ্য গ্রহণ। ছোট হয়ে যাচ্ছে ডিম। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তরুণ কুমার দত্ত বলেন, তাপদাহে এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১২টি গরু মারা যাওয়ার খবর আমরা জানতে পেরেছি। তীব্র গরমে গবাদিপশুর খামারিদেরকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমরা এ পর্যন্ত ২ হাজার লিফলেট বিতরণ করেছি এবং সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। যাতে তীব্র তাপদাহে গবাদিপশুদের খামারিরা সতর্ক হতে পারে এ উদ্দেশ্যে আমাদের মাইকিং চলমান রয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের পশুর চিকিৎসা সেবাসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, অতিরিক্ত তাপদাহে গবাদিপশুর মৃত্যু হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং সচেতনতামূলক মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  হিট স্ট্রোকে গবাদিপশুর মৃত্যু   গাইবান্ধা   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close