যমুনা নদীর তলদেশ ছেদ করে সাবমেরিন ক্যাবলে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসবে, বিদ্যুতের বহুমুখী ব্যবহারে অবহেলিত জনপদ আধুনিক যুগে প্রবেশ করবে, কৃষিসহ চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে জীবন মান বদলে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দাদের। বাস্তবতা হচ্ছে, সাবমেরিন ক্যাবল বসেছে, সঞ্চালন লাইনও বসেছে, বিদ্যুতও আসে, তবে মাঝে মাঝে। আসা যাওয়ার মাঝে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪/৫ ঘণ্টা বিদ্যুতের সুবিধা পায় চরাঞ্চলের মানুষেরা। চলমান তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা, কৃষি কাজ, চলাচল ও দৈনন্দিন কাজকর্ম। ৪০ ডিগ্ৰি তাপমাত্রায় বিদ্যুৎ বিহীন ঘরে থাকলে যেমন শরীর জ্বালাপোড়া করে তেমনি প্রচণ্ড রোদে বাইরে পুড়তে হয় বলছেন স্থানীয়রা। বিদ্যুৎ ঘাটতি ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, যমুনা নদী দ্বারা বিভক্ত কাজিপুর উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে ৬টি ইউপি চরাঞ্চলে। জনশুমারী ও গৃহ গণনা-২০২২ অনুযায়ী উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৪২ জন, চরাঞ্চলে বসবাস করে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৯৯৯ জন। পূর্বদিকের পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, এর মাঝে চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্ৰামে যমুনা নদীর একটি ক্যানেলের তলদেশ ছেদ করে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে ২০২০ সালে চরাঞ্চলের ২৬ হাজার ৫ শতের অধিক গ্ৰাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
মনসুরনগর ইউনিয়নের কৃষক খাইরুল ইসলাম জানান, ভুট্টা পেকে ক্ষেতে ঝরে পড়ছে, বিদ্যুতের জন্য মাড়াই করতে পারছেন না, ঝড় বা বৃষ্টি হলে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। নাটুয়ারপাড়ার ব্যাটারি চালিত রিকশার চালকেরা জানান, অতিরিক্ত খরচে জেনারেটর দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে, তাপের কারণে মালামাল পরিবহন ও লোক চলাচল কমেছে।
খাসরাজবাড়ি গ্ৰামের সচেতন গৃহিণী সুফিয়া জানান, ধুধু বালুচরের গরম বাতাস ঢেউয়ের মতো আসে, ঘরের বাইরে থাকলে শরীর পুড়ে যায়, ঘরে থাকলে জ্বলে, ছোট বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
চরকান্তনগর গ্ৰামের কৃষক জয়নাল জানান, চরাঞ্চলে ইরি মৌসুমে প্রতিদিন ধান ক্ষেতে পানি দিতে হয়, বিদ্যুৎ না থাকায় ডিজেল পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত খরচে সেচ দিতে হয়, অতিরিক্ত গরমে ক্ষেত খামারে কাজ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চরগিরিশ ইউনিয়নের সচেতন ব্যক্তি নুরুল ইসলাম বলেন, কৃষি ভাণ্ডারে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খরচ কমাতে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের একান্ত প্রচেষ্টায় কাজিপুর এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অবহেলিত চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসে, মানুষের যতটা প্রত্যাশা ছিলো ততটাই আশাহত হয়েছে, বরং বিড়ম্বনা বেড়েছে, কৃষি অর্থনৈতিক চরাঞ্চলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রুপসা জোনের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত এ জি এম আবু বকর সিদ্দিক আকন্দ বলেন, কাজিপুরের চরাঞ্চলে ৭০০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনে প্রায় ২৬ হাজারের অধিক সংযোগ রয়েছে, এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪ কিলোওয়াট, এর বিপরীতে ৩ ভাগের ১ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র না থাকায় এ সমস্যা দীর্ঘদিনের, এছাড়াও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা আছে, ফলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ একটু বেশি, এ অবস্থা থেকে এই মুহূর্তে উত্তরণের সুযোগ কম।