ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তালিকা তৈরি ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় গলদ
জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে চাল বিতরণে অনিয়ম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৬:৩৭ এএম  (ভিজিট : ২৮০)
জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে বেকার জেলেদের জন্য বরাবরই সরকারের তরফ থেকে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বছর পটুয়াখালীর নিবন্ধিত জেলেরা জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাও আবার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অর্ধেক চাল দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরিতে সমন্বয়ের অভাব, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ অধিকারবঞ্চিত প্রকৃত জেলেরা।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল তালিকা তৈরি ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সরকার শ্রেণি অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে চাল বরাদ্দ দেয়। কিন্তু চাল বিতরণের সময় জেলেদের আলাদা শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে বরাদ্দের চেয়ে বেশি জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করতে হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সবার সঙ্গে পরামর্শক্রমেই কাজটি করা হয়। জেলে নয় এমন কিছু লোকের নামও তালিকায় আছে। পেশা পরিবর্তনের কারণে এমনটি হতে পারে। এ জন্য আমরা আবেদন চেয়েছি। আবেদন পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যারা জেলে নয় আমরা তাদের নাম বাতিল করব। অন্যদিকে যারা নতুন করে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গলাচিপা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহুরুন্নবী বলেন, গলাচিপা উপজেলায় মোট ২০ হাজার ৮৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ হাজার জেলের নামে ২ মাসের চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বেশিসংখ্যক জেলে বাদ পড়ার বিষয়টি উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় সংসদ সদস্য এস.এম. শাহাজাদার উপস্থিতিতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা উত্থাপন করলে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সরকারের বরাদ্দকৃত এই চাল অধিকসংখ্যক জেলেদের মাঝে বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে যে জেলে এক মাসের চাল পেয়েছেন তাকে অন্য মাসে বাদ রেখে অন্যদের চাল দেওয়া হয়েছে। তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালে জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। আবারও এ তালিকা হালনাগাদ করা হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম শোভন বলেন, চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোক দিয়ে তালিকা করেছেন। আমি যে তালিকা করেছি সেই তালিকা নেননি। ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দাদন মিয়া বলেন, তালিকা করেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা টাকা নিয়ে তাদের পছন্দের লোকের নাম তালিকায় ঢুকিয়েছে। যাদের চাল প্রয়োজন তারা না পেয়ে পেয়েছেন অন্যরা। তালিকায় এমন অনেকের নাম আছে যারা এখন দেশেই থাকেন না। মোটরসাইকেল চালক, ভ্যানচালক, দোকানদার, ফার্মেসির লোকজনও চাল পেয়েছে। ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে যখন ঢালাওভাবে জেলেদের নিবন্ধন হয়েছে তখন অনেকের নাম ঢুকেছে তালিকায়। তাদের অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করেছে। তাদের দেখেই সবাই অভিযোগ করে যে, ভ্যানচালক অটোচালকরা চাল পায়। 

ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, উপজেলা সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল অধিকসংখ্যক জেলেদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৬ জন। চলতি জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে ভিজিএফ বরাদ্দ হয়েছে ৮০৮ জন জেলের নামে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৮০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পেয়েছেন ৪০ কেজি করে। তাদের অভিযোগ, তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য দিতে হয়েছে উৎকোচ। সখ্যের কারণে অন্যান্য পেশাজীবীরাও চাল পেয়েছেন। অন্যদিকে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক প্রকৃত জেলে। তাই যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নিবন্ধিত তালিকা হালনাগাদ করার দাবি তুলেছেন প্রকৃত জেলেরা।   

স্থানীয় জেলে বিল্লাল উদ্দিন নিজের কার্ড দেখিয়ে বলেন, ‘আমি আগে চাউল পাইতাম। এই চেয়ারম্যান তালিকা থেইকা আমার নাম কাইটা দিছে। যারা ভ্যান চালায়, দোকান দেয়, কৃষি কাজ করে তাগো চাউল দেয়। কিন্তু আমি ভোট দেই নাই দেইখা জাইল্লাগিরি করলেও চাউল পাই না।’ মোফাজ্জেল নামের আরেক জেলে বলেন, ‘আশপাশের অনেক ইউনিয়নের জেলেরা ২ মাসে ৮০ কেজি করে চাউল পাইছে। আমরা ক্যান পামু না? চেয়ারম্যান ক্ষমতায় আসার পর আমরা একবারও পুরা চাউল পাই নাই। যারা জেলে না, সাগর চোখেও দেখে নাই, কোনোদিন নদীতেও যায় নাই তারাও চাউল পাইছে। আমাগো চাউল ভাগ কইরা তাগো দিছে।’ আলামিন মোল্লা বলেন, ‘অনেক ওয়ার্ডে কোনো জেলেই নাই। কিন্তু তালিকা কইরা অন্য মানুষের নাম ঢুকাইয়া আমাগো চাউল কম দিয়া তাগো ভাগ কইরা দেয়। আমরা আমাগো ন্যায্য অধিকার চাই।’

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close