ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পানি উঠছে না চার হাজার নলকূপে
গাংনীর ১০ গ্রামে পানির জন্য হাহাকার
প্রকাশ: সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪, ৪:৪৬ এএম  (ভিজিট : ৩৪৪)
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। বেশ কিছু নলকূপে অনেকক্ষণ চাপ দেওয়ার পর সামান্য পানি ওঠে। সিংহভাগ নলকূপে পানি না পাওয়ায় অনেক দূরে গিয়ে পানি নিতে ভিড় করছেন সবাই। সেচপাম্পে পানি না ওঠায় সেচ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

মাছ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। আবার অনাবৃষ্টি, নদীর পানি শুকিয়ে গিয়ে পানির স্তরকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। এমনটি দেখা গেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নে। এখানে অন্তত ১০ গ্রামের চার হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস বলছে, সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এলাকাবাসীর খাবার পানিসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৫টি সাব-মার্সেবল পানির পাম্প এসেছে। সেগুলো বসাতে এক মাস সময় লাগবে। তখন আর পানির সংকট থাকবে না।
 
ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিষদের ফান্ডে এমন কোনো অর্থ নেই, যা দিয়ে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বিষয়টি বিবেচনায় এনে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসকে গভীর নলকূপ বসানোর আহ্বান জানান তিনি। 

জানা গেছে, গাংনীর ষোলটাকা ইউনিয়ন মাথাভাঙ্গা নদীর অববাহিকায়। ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে রয়েছে চার হাজার নলকূপ। হস্তচালিত এসব নলকূপে শীত ও বর্ষাকালে পানির সংকট না থাকলেও গ্রীষ্মকালে তা প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষ করে ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে পানির স্তর একেবারেই নিচে নেমে যায়। এতে করে ৯০ ভাগ নলকূপে পানি উঠে না। যাদের নলকূপ একটু গভীর সেখানে পানি নিতে ভিড় জমায় সবাই। গ্রামের এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় ছুটতে হয় পানি আনার জন্য। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ অঞ্চলে বৈশাখ মাসেও পানির কোনো দেখা নেই। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টি আর তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে মানুষ ও পশু-পাখি। এখানে ৭৫ ফুট থেকে ১০০ ফুট গভীরে পাইপ দিলেও ভালোমতো পানি ওঠে না। কোথাও কোথাও ১৫০ থেকে ২০০ ফুট পাইপ দেওয়া হয়। আর সেচের জন্যও একই পরিমাপের পাইপ লাগে। বছরের ৭/৮ মাস পানি পাওয়া গেলেও বাকি সময় পানির কষ্ট করতে হয়। 
গেল দুবছর কিছুটা কষ্ট হলেও এবার কষ্টের শেষ নেই। খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি সেচ কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। সেচের পানির জন্য গভীর রাত পর্যন্ত চাষিদের অপেক্ষা করতে হয়। দিনে পাম্পে পানি ওঠে না এবং অনেক সময় বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের মোটর পুড়ে যায়। টিউবওয়েলগুলোতে দশ চাপে এক গ্লাস পানিও ওঠে না।

উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের গরুর খামারী আশাদুল জানান, গেল দুই বছর ধরে গরমকালে প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহের কারণে নলকূপে পানি ওঠে না। গত এক বছরে বাড়ির দুটি নলকূপে পানি না পাওয়ায় নতুন করে নলকূপ বসানো হয়েছে। এটাতেও ঠিকমতো পানি ওঠে না। খাবার পানিসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, অনাবৃষ্টিতে আম ও লিচু গাছের গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।

জুগিরগোফা গ্রামের মাছ চাষি ও পল্লী চিকিৎসক আবু বক্কর জানান, তার পাঁচটি পুকুর রয়েছে। পুকুরে পানি দেওয়ার জন্য তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। একটি পাম্পের পানি দিয়ে কোনোরকম মাছ টিকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চালান সম্ভব হবে না। একই কথা জানালেন স্থানীয় মাছ চাষি আসাদুল হক ও ইনামুল হক। এবার মাষ চাষে লোকসান হবে বলে ধারণা তাদের।

মানিকদিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়ির নলকূপে পানি না থাকায় প্রতিবেশী বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে পানি নিতে হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে মানুষ ও গবাদি পশুর জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। তাই দুই তিনবার পানি নিতে আসতে হয়। তাদের মতো ১০-১২টি পরিবার এ নলকূপ থেকে পানি নেয়। ফলে দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পানি নিতে হয়। ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট নিরসনের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে গভীর নলকূপ বসানোর দাবি জানান তিনি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close