কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এলাকাগুলোতে খাবার পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। সব এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েলগুলোতে উঠছে না পানি। গত দুই মাস ধরে পানি তীব্র সংকটে কষ্ট করেছেন এ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া তথা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভেড়ামারায় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় প্রায় শতকরা ৯৬ জন লোক টিউবওয়েলের পানি পান করে। কিন্তু উপজেলার প্রায় ২০ হাজার টিউবওয়েলের বেশির ভাগেই মিলছে না পানি। পানি সংকটে গ্রামে গ্রামে চলছে হাহাকার। অনেকটা বাধ্য হয়েই স্থানীয়রা খাল—বিল—হাওর ও পুকুরের পানি ব্যবহারে চেষ্টা করলেও সেখানেও পানি মিলছে না।
এলাকাবাসীর দাবি, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মা নদী শুকিয়ে গেছে। যার ফলে উক্ত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা—কপোতাক্ষ খালেও পানি নেই। ফলে ঐসব এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে গিয়েছে। অতিরিক্ত দাবদাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ ও অসংখ্য সাব—মার্সিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ—গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ফলে অগভীর টিউবওয়েলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির যেমন সংকট দেখা দিয়েছে, গৃহস্থালির কাজসহ, কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্যও পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উপজেলা, পৌরসভার কাচারি পাড়া, নওদাপাড়া, পদ্মা নদী ঘেঁষা বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা, আড়কান্দি, মেঘনাপাড়া, মাধবপুর, বাহিরচর ইউনিয়নের বারোদাগ, ষোলদাগ ও বারোমাইল—সহ অধিকাংশ এলাকায় খাবার পানি ও সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, খাল, বিল, জলাশয় ভরাট ও দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ খালে পানি নেই। নদীগুলো এখন মৃতপ্রায় এছাড়াও নিচু ও কৃষিজমি মাটি এবং বালু ফেলে ভরাট করে ফেলায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এখন প্রায় প্রতিটি টিউবওয়েলই অকেজো। টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না।
আড়কান্দি গ্রামের বিলকিছ জানান, আমাদের টিউওবয়েলে পানি উঠছে না, তাই দূর—দূরান্ত থেকে কারো বাড়ির সাব—মার্সিবল অথবা ডিপ টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি আনা লাগছে।
ভেড়ামারা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ডিপ টিউবওয়েলে ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তারা টিউবওয়েলে পানি উঠছে। পানি সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।