ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

‘ভুল’ টেন্ডারে রাস্তার কয়েক’শ গাছ কেটে সাবাড়
প্রকাশ: রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ৫:০৪ পিএম আপডেট: ২১.০৪.২০২৪ ৫:১৮ পিএম  (ভিজিট : ৯২১)
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় বন বিভাগের ‘ভুল’ টেন্ডারে রাস্তার গাছ কেটে সাবাড় করেছেন ঠিকাদার। টেন্ডারে দেয়া কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে অন্যত্র। এ ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থলে জেলা বন কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে উপজেলা সাবেক বন কর্মকর্তা ‘ভুল’ স্বীকার করেন। এরপর সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউপির ছয়গ্রাম থেকে তিলাহারী হয়ে কেশরহাট যাতায়াতের রাস্তার দু-ধারের মাঝারি বনজ গাছ কেটে সাবাড় করছেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে থাকা টেন্ডারের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, উপজেলার ধুরইল ইউপির ‘খানপুর নেয়াবজানের বাড়ির উত্তর সীমানা হতে খানপুর স্লুইসগেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাঁধ বাগান (অংশ)’ মোট পাঁচ লটে টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ঠিকানা বদলে অন্য এই রাস্তাটির গাছ কেটে সাবাড় করছেন। বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠান। প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের জানান, টেন্ডারের ঠিকানা ‘ভুল’ হয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমসিম খেয়ে যান তারা। উত্তরে বেশ গড়মিলও পাওয়া যায়। সময়ের আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির পর্যবেক্ষণে বন বিভাগের টেন্ডারে এতো বড় ‘ভুল’ ধরা পরে।

উপজেলা সাবেক বন কর্মকর্তা আলী প্রতিবেদকের কাছে ‘ভুল’ স্বীকার করে বলেন, রাস্তার ধারের আম গাছে মুকুল না আসায় তারা বনজ গাছ কেটে ফেলার জন্য ৫ লটে টেন্ডার আহবান করেন। টেন্ডারে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাই। তবে ‘ভুল’ করে ভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে। তিনি গত কার্যদিবসে অবসরে গেছেন বলেও জানান। এসময় তার সাথে সায় দেন ঘটনাস্থলের উপস্থিত থাকা জেলা সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদিজ্জামান, উপজেলা বন কর্মকর্তা নুরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা। 

বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি আম গাছ রক্ষায় অন্তত ১০টি মাঝারি বনজ গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। অথচ প্রাচীন এই রাস্তাটিকে টেকাতে বারবার সংস্কার করা হলেও বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তাটি ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে যায়। বন্যা কালে রাস্তাটির দু-পাশের বিলে পানিতে থয় থয় করে। অবশেষে বনজ ও ফলজ গাছ লাগিয়ে রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। কিন্তু রাস্তাটি টেকা মাত্রই বনবিভাগের এমন সিদ্ধান্ত রীতিমত অবাক করেছে স্থানীয়দের। 

জানা গেছে, টেন্ডারে কাটা গাছ বিক্রি করে তার একটি অংশ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাঝে বিতরণ করা হয়। বাকী টাকা বনবিভাগে জমা করা হয়। কেবল যারা গাছ গুলোকে দেখভাল করেন তারাই এই টাকার অংশ পান। মাঝারি এই গাছ গুলো কেটে ইট ভাটায় দিচ্ছেন ঠিকাদার। 

এদিকে, বন বিভাগের টেন্ডারের কাগজপত্র ঘেঁটে পাওয়া তথ্য বলছে, গাছ কাটা হবে ধুরইল ইউপি এলাকার ৩ কিলোমিটার রাস্তার বনজ গাছ। কিন্তু গাছ কাটা হচ্ছে ঘাসিগ্রাম ইউপি এলাকায়। অর্থাৎ টেন্ডার হয়েছে এক জায়গায় আর কাজ হচ্ছে আরেক জায়গায়। দু-ঘটনাস্থলের ফারাক (দূরত্ব) রয়েছে প্রায় কয়েক কিলোমিটার। এছাড়াও কাজ বাস্তবায়নে জানানো হয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাউকে। এত বড় টেন্ডার অথচ অবগত নন খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। 

সময়ের আলোকে ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ঘাসিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম বাবলু তিনিও অবগত নন। তবে কেন বন বিভাগের এতো বড় টেন্ডার জানেন না কেউ? 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে কাগজে দেখায় এক আর বাস্তবায়ন করে আরেক। বিনিময়ে তাদের মাসহারায় মাসগুল। সবকিছু সাবাড়ে নেমেছে তারা। সরকার যেখানে চারা রোপণে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে বন কর্মকর্তাদের এহেন কাণ্ডে হতবাক হতে হয়, বৈকি!

এ বিষয়ে সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, এটা একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। পরবর্তীতে সেটা সংশোধন করা হয়েছে। একারণে আমি আমার সেকেন্ড ম্যানকে পাঠিয়েছিলাম। পরে ৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৭৫০ টাকার ৫ লটের টেন্ডারের কাগজপত্র সংশোধন করা হয়েছে। তবে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভুল টেন্ডার   রাস্তার গাছ কেটে সাবাড়   মোহনপুর   রাজশাহী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close