প্রকাশ: শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৯:৩৫ পিএম (ভিজিট : ৮১২)
লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধা। দিনে তীব্র তাপদাহ, রাতে ভ্যাপসা গরম। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে গাইবান্ধায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে জনজীবন অতিষ্ঠ। দিনরাত মিলিয়ে ৭/৮ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ধকল পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। নেসকোর আওতাধীন গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২ এর আওতায় থাকা শহরের গ্রাহকদেরও ভোগান্তি কিছুটা কম। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরবরাহে ঘাটতি থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জেলায় চাহিদার থেকে প্রায়ই সরবরাহে ঘাটতি থাকে ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ঘাটতি পূরণে জেলার গ্রাম-শহরে লোড ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ফসলের ক্ষেতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানায়। অপচয় হচ্ছে শ্রমিকদের কর্ম ঘণ্টা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। গাইবান্ধার সাত উপজেলার গ্রামীণ জনপদে দিনে-রাতে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে লাখ লাখ গ্রাহককে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একটানা লোডশেডিং গ্রীষ্মের তাপদাহে বৃদ্ধ-শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
২৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাইবান্ধা জেলায় গ্রীষ্মকালে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৯০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহে ঘাটতি থাকছে দৈনিক ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট। নেসকোর আওতাধীন গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২ কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলায় নেসকোর দুই বিভাগের আওতায় প্রায় ৬৫ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। নেসকোর আওতায় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট।
শনিবার (২০ এপ্রিল) বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদার সবটুকুই সরবরাহ পাওয়া গেছে। ফলে ওই দিন নেসকোর গ্রাহকদের লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে ওইদিন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬৬ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৫২ মেগাওয়াট। ফলে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করতে হয়েছে।
এছাড়া গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ জুড়ে ধানসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করা হয়েছে। চাষিরা গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচ দিয়ে ফসলের পরিচর্যা করছেন। এ ছাড়া জেলার সাত উপজেলায় চাউলকলসহ ছোটবড় কয়েক হাজার কলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা থাকে। পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। শহরে কম হলেও জেলার গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর লোডশেডিং বেশি হয়। শহর সন্ধ্যার পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হলেও গ্রামে রাত-দিন সমান তালে চলে লোডশেডিং। শহরের বিভিন্ন এলাকাগুলো নেসকোর অধীনে থাকায় অনেকটা রুটিন করে লোডশেডিং করা হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে থাকা গ্রামীণ জনপদের মানুষকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামে ২৪ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা।
অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে বিসিক শিল্প নগরীসহ গাইবান্ধার সাত উপজেলার ছোট-বড় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন কর্ম ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। জেলা শহরের সার্কুলার রোডে গোরস্থান মোড়ে অবস্থিত একটি আয়রন ফ্যাক্টরির মালিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনের উৎপাদন এখন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এমনটা চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের।’
গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিফ বলেন, আমরা গাইবান্ধায় শুধু অপারেশনাল কাজটা দেখে থাকি। চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় জাতীয় নির্দেশনা অনুযায়ী লোডশেডিং করা হচ্ছে।
নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনানুযায়ী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।