ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিহত ২, আহত ৫
প্রকাশ: শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:৩৬ এএম  (ভিজিট : ২৫৬৮)
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার একটি গ্রামে কালীমন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হামলায় সহোদর দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৫ জন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার বিপুলসংখ্যক আমর্ড পুলিশ, পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া ফরিদপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়াও ঘটনাস্থলে চার প্লাটুন বিজিবি ও আমর্ড পুলিশ টহলে রাখা হয়েছে। গ্রামটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মন্দিরে আগুন দেওয়া ও হামলায় হতাহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে আটক করা যায়নি। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম পঞ্চপল্লী। এ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন বেশ কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক। তারা স্কুলের দুটি টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন। স্কুলের পাশে একটি কালীমন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর প্রতিমার গায়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকশ বিক্ষুব্ধ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে স্কুলে থাকা নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে স্কুলের গ্রিল ও দরজা ভেঙে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা শ্রমিকদের স্কুল কক্ষে বেঁধে রেখে লাঠি, লোহার রড ও ইট দিয়ে আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে। হামলাকারীরা নির্মাণকাজের মালামাল আনার জন্য একটি নসিমনও (ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার পরিবহন) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হামলার খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মাগুরা জেলা পুলিশ-র‌্যাবের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে গ্রামবাসী।

এ সময় গ্রামবাসী পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের বেশ কিছু সদস্য আহত হন। সন্ধ্যার পর থেকে টানা ৬ ঘণ্টা পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে রাত ১টার দিকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলমের নির্দেশে পুলিশ ২৩৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে গ্রামবাসীকে সরিয়ে দিয়ে স্কুলের ভেতর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় সাত নির্মাণ শ্রমিককে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে নির্মাণ শ্রমিক মধুখালীর নওপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট এলাকার শাহজাহান খানের ছেলে আরশাদুল (১৫) ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ভাই আশরাফুল (২১) মারা যান।

আহত পাঁচ শ্রমিকরে মধ্যে দুজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অন্য তিনজনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর পঞ্চপল্লী গ্রামে বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশ-র‌্যাব ও আমর্ড পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি টহলে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত দুই সহোদরের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কালী মন্দিরের মহিলা সেবায়েত তপতি মণ্ডল জানান, সন্ধ্যায় কালী মন্দিরে আলো জ্বালিয়ে বাড়ি চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি দেখেন মন্দিরের পাশে অবস্থিত স্কুলের শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। পরে তিনি শুনতে পান মন্দিরে আগুন লেগেছে। তিনি বলেন, আমি দ্রুত এসে কালী মূর্তির শরীরে থাকা কাপড়ের আগুন নেভাই। পরে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। কারা আগুন দিয়েছে তাও আমি দেখিনি।

স্কুলের নির্মাণকাজের ঠিকাদার মনজিল শেখ জানান, সন্ধ্যার পর শ্রমিকরা আমাকে ফোন করে জানান স্কুলের পাশে মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। তারা মন্দিরে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেন। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসী শ্রমিকদের স্কুল কক্ষে আটকে রেখেছে বলে জানানো হয়।

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে পঞ্চপল্লী গ্রামটি অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। সেখানে একটি স্কুলের নির্মাণকাজ করছিলেন বেশ কিছু শ্রমিক। স্থানীয় জনতা ওই নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে স্কুল কক্ষে আটকে রাখে।

পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম জানান, কালীমন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগে স্কুলের নির্মাণকাজে থাকা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু গ্রামবাসী পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর, মাগুরা, রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব পাঠানো হয়। পুলিশ বেশ কিছু ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে জন্য ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত দুই সহোদরের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হামলার ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ-র‌্যাব পাঠানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চার প্লাটুন বিজিবি ও বিপুলসংখ্যক আমর্ড পুলিশ আনা হয়েছে। ঘটনাটি কেউ যাতে ভিন্ন খাতে না নিতে পারে সে জন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close