ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রম
দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে এসএসসি পরীক্ষা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ২:০৮ এএম  (ভিজিট : ৩৮১৬)
আগামীতে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে মাধ্যমিকের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি নিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। আগামী বছর দশম শ্রেণি শেষ করে তারা এই পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ জন্য চলতি বছরের শেষে পরীক্ষামূলকভাবে পাবলিক পরীক্ষার আদলে নবম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অস্পষ্টতা আছে। এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষা কাঠামোয় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামোর খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে মাধ্যমিকে পাবলিক পরীক্ষা বা মূল্যায়ন হবে। প্রকল্পভিত্তিক কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট, সমস্যার সমাধান ইত্যাদির পাশাপাশি একটি অংশের মূল্যায়ন হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। তবে এই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেওয়ার ধরন এখনকার মতো মুখস্থনির্ভর হবে না। একজন শিক্ষার্থী যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, সেগুলোই মূলত সৃজনশীল উপায়ে লিখতে বলা হবে।

পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিভিন্ন শ্রেণিতে বছরজুড়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের পাশাপাশি বছরে দুটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এর মধ্যে একটি হবে শিক্ষাবর্ষের ৬ মাস পর এবং আরেকটি হবে ১২ মাস পর। বিদ্যালয়ের এসব মূল্যায়নেও এক দিনে এক বিষয়ের মূল্যায়ন হবে। মূলত স্কুল সময়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ৫ ঘণ্টার বিষয়টি ঠিক করা হয়েছে।

গত বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন এই শিক্ষাক্রম শুরু হয়। আর এ বছর নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয়েছে এই শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিক্ষাকালীন)। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, মানে পরীক্ষার ভিত্তিতে। চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে জিপিএভিত্তিক ফলের ব্যবস্থা থাকছে না। একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করে ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ চিহ্ন দেবেন শিক্ষকরা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রিভুজ শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ পারদর্শিতার চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবার রূপ নেবে ‘ত্রিভুজ’ পাওয়ার লড়াইয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বর্তমানে জিপিএর (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়। ২০০০ সালের এসএসসি ও ২০০১ সালের এইচএসসিতে সবশেষ ডিভিশনে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ‘চতুর্ভুজ’ চিহ্ন হলো পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। ‘বৃত্ত’ চিহ্নিতটি পারদর্শিতার অন্তর্বর্তীকালীন স্তর (মাঝারি)। আর যে শিক্ষার্থী নির্ধারিত দক্ষতা পুরোপুরি অর্জন করবে, তাকে ‘ত্রিভুজ’ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হবে। অবশ্য এসব চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়নের রেকর্ড সংগ্রহ করা হলেও ট্রান্সক্রিপ্টে চিহ্নগুলোর উল্লেখ থাকবে না। ট্রান্সক্রিপ্টের ফরম্যাটে এই চিহ্নগুলোর পরিবর্তে শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পারদর্শিতার মাত্রা ‘টিক’ চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হবে। এখানে ত্রিভুজকে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্তকে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজকে উন্নতি প্রয়োজন হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আর একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে স্কুলে উপস্থিতির হার ও বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতাকে বিবেচনা করা হবে। ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলে তাকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে। তবে তিনটি বিষয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে কোনো শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা যদি ‘চতুর্ভুজ’ থাকে, তা হলে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে না। আর পারদর্শিতার বিবেচনায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি কম হলে পরের ক্লাসে তাকে উঠতে দেওয়া হবে কি না, তা শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে গ্রেডিং পদ্ধতির পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে ত্রিভুজ, বৃত্ত আর চতুর্ভুজের মতো চিহ্ন।

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির অভিজ্ঞতা নিয়ে মাতৃছায়া জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষক মো. রমজান হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, প্রথাগত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন) মূল্যায়ন হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, অর্থাৎ পরীক্ষার ভিত্তিতে। তবে এই পরীক্ষাও আগের মতো শুধু খাতা-কলমনির্ভর নয়। ভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যেমন- অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্প, ইভেন্ট আয়োজন, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির মাধ্যমে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম হচ্ছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ পারদর্শিতা বোঝাতে ব্যবহার করতে হবে ত্রিভুজ। পারদর্শিতার সর্বনিম্ন সূচক চতুর্ভুজ। আর কোনো শিক্ষার্থী তিনটি বিষয়ে চতুর্ভুজ পেলে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না। মূল্যায়নের এসব বিষয় আরও সহজ ও বোধগম্য করা প্রয়োজন বলে এই শিক্ষক মনে করেন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু সময়ের আলোকে বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমবে না। এ জায়গা দখল করবে এবার ‘ত্রিভুজ’। ‘কোচিং কমবে না’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা বেশি দেওয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের কোচিংয়ের নির্ভরতা বাড়বে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক কাজী ফারুক হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার পরিপূর্ণ পরিকল্পনা। একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্ট মেশিন লার্নিং এসব মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের দক্ষতানির্ভর শিক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। সামঞ্জস্যপূর্ণ নাগরিক চাইলে দক্ষতানির্ভর শিক্ষাক্রম প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা শিক্ষার্থীরা করছে না। তারা শ্রেণি কার্যক্রম উপভোগ করছে। সময়ের সঙ্গে, যুগের সঙ্গে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হবে এটিই স্বাভাবিক। শিক্ষাক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন একটি ভালো সূচনার ইঙ্গিত দেয়। যেকোনো পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ থাকে।

তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য দক্ষ জনশক্তি চাই। আর দক্ষ জনশক্তির জন্য দক্ষতানির্ভর পাঠ্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষাগুলো হয় শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে। 

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, মূল্যায়ন পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো কিছু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সময়ের আলো/জেডআই




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close