ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পানির জন্য হাহাকার প্রমত্ত তিস্তায়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ২:১৮ এএম  (ভিজিট : ৪৪৬)
খরস্রোতা তিস্তা বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে দু’কূল ভাসিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। হিংস্র থাবায় ভেঙে নিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও স্থাপনা। সেই তিস্তা চৈত্রের শুরুতেই শুকিয়ে মরুভূমি হয়েছে। ফলে ‘প্রমত্ত তিস্তা’ পানির অভাবে জীর্ণদশায় ভুগছে। তিস্তা নদীতে বর্ষা মৌসুমে পানির দেখা মিললেও শুকনো মৌসুমে থাকে হাঁটুপানি আর ধূ-ধূ বালুচর। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা পানিশূন্য হয়ে কঙ্কালসারে পরিণত হয়েছে। তিস্তা এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীটি ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও ঝুলে আছে বছরের পর বছর।

তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্তিত্ব রক্ষার পানিটুকুও না থাকায় তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। খেয়াপাড়ে বা মাছ ধরতে বর্ষায় হাজারো নৌকা নিয়ে অবারিত ছুটে চলা মাঝিমাল্লাদের দৌড়ঝাঁপ থেমে গেছে। পানি আর মাছভর্তি তিস্তার বুকে চিকচিক করছে বালুকণা। 

পানিশূন্য হওয়ায় তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুকজুড়ে জমি জেগে উঠলেও সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। কেউ কেউ দূর থেকে পানি এনে প্রাণ টিকিয়ে রেখেছেন চাষাবাদ করা ফসলের।

জানা যায়, আশির দশকের দিকে প্রমত্ত তিস্তা নদী দিয়ে কাউনিয়া, হারাগাছ, কামারজানি, সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী, জামালপুর, ইসলামপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য জমজমাটভাবে চলত। ওই সময় নৌপথ ছিল সরগরম। এখন তিস্তা পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। নাব্য কমে যাওয়ায় নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার জীবন কাটাচ্ছেন নৌ শ্রমিকরা। পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় এ নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

নৌকার মাঝি আবেদ আলী বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নদী পারাপারে এখন আর নৌকা লাগে না। লোকজন হেঁটে পার হয়। তিস্তাপাড়ের জেলে বলরাম চন্দ্র বলেন, পানি না থাকায় মাছ নেই তিস্তায়। সারাদিন নদী থেকে তিনবেলা খাবার জোটে না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি।

তিস্তাপাড়ের কৃষক আউয়াল মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তিস্তায় সেচ মেশিন লাগিয়ে চাষাবাদ করতাম। এতে মেশিনে পানি উঠত বেশি। তেল খরচ হতো কম। এখন নদীতে পানি না থাকায় সেচ বোরিং স্থাপন করে চাষাবাদ করায় তেলখরচ বেশি হচ্ছে। আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল বালুচর। এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।

হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল মোস্তফা বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষজন কয়েক বছর ধরে শুধু শুনেই আসছেন তিস্তা নদী খননসহ তিস্তাপাড়ের উন্নয়নে সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করছে। আজও এ প্রকল্পের বাস্তব কোনো রূপ দেখতে পাচ্ছেন না তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তা খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এতে সারা বছরই তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকবে। চলাচল করবে নৌকা। নদীতে পাওয়া যাবে মাছ। নদীর বুকে জেগে ওঠা বিপুল পরিমাণ জমি হয়ে উঠবে আবাদি।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে ৩-৪ মাস পানি প্রবাহ থাকে। তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী খননসহ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা জেগে উঠবে আগের রূপে। বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার।

তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক মুন্সী আমিনুল ইসলাম সাজু বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে না। এছাড়া নাব্য ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জলাধার তৈরি করা হলে তিস্তা আগের জীবন ফিরে পাবে। তাহলেই এ অঞ্চলের মানুষ তিস্তার সুফল ভোগ করতে পারবে।

লেখক-সংগঠক কঙ্কন সরকার বলেন, নদীর তলদেশ ভরে উঠছে। উজানে ভারতের বাঁধের কারণেই তিস্তার পানিপ্রবাহে বাধা পাচ্ছে। নদীর নিয়ম অনুযায়ী যে পানি বয়ে আসার কথা, তা না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়নসহ পরিকল্পিত এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে নদীখনন ও জলাধার তৈরি করা।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close