ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ঈদ আয়োজন : ভালো মানুষের বড্ড প্রয়োজন
প্রকাশ: সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:০২ এএম আপডেট: ০৯.০৪.২০২৪ ৮:১২ এএম  (ভিজিট : ২১৫৪)
জীবন সংসার যেন এক নাট্যমঞ্চ। যেখানটায় প্রতিনিয়ত সবাই মর্যাদা এবং যোগ্যতানুযায়ী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। এ যেন এক খেলা! পৃথিবীতে মানবের আগমন থেকে শুরু করে প্রস্থান পর্যন্ত সময় পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা সবকিছুতে তাল মিলিয়ে চলার মাঝেই সার্থকতা। সমাজে নানা পদের এবং ঢঙের মানুষের দেখা মেলে। এসব মানুষজনকে হলফ করে এক বাক্যে কি ভালো মানুষের তকমায় ভূষিত করা যায়? ভালো ডিগ্রি অর্থবিত্ত চাকরি ব্যবসা কি তাকে ভালো মানুষের অভিধায় সম্মানিত করতে পারে? উঁচু পদের মানুষজন যখন রুচি এবং অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তখন অবাক হই।

একজন শিশু পৃথিবীতে আসার মাধ্যমে পরিবার-সংসারে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। বাবা-মা-শিক্ষক নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করে, যাতে করে সে মানবিক, সামাজিক এবং আলোকিত মানুষ হয়। যেমনটা আমাদের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সময় প্রয়োজন এবং সম্পদের প্রাপ্তি এসবের মোহে, অভিভাবকরা হাল আমলে সন্তানকে কোথায় দেখতে চাচ্ছেন? একবারও কি ভেবেছি? ভালো মানুষের চেয়ে ভালো ছাত্র রোজগারের মাধ্যম এসবে যেন মনোনিবেশ বেশি? সন্তানের দিন শুরু হয় ভারী স্কুল ব্যাগ বহনের মাধ্যমে। যেখানটায় মক্তব শিক্ষা অনেকটাই অনুপস্থিত। ক্লাস, কোচিং, প্রাইভেট গৎবাঁধা ছকে আটকা। ছেলেমেয়েদের পাড়াপড়শী খেলার সাথি সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান-পার্বণে কদাচিৎ দেখা মেলে। প্রজন্মকে ইনকিউবেটর রেখে শারীরিক, মানসিক ও ধার্মিক আগামী কী করে আশা করতে পারি?

সমাজ-সংসারে নানাবিধ অস্থিরতা। আত্মিক শান্তি শূন্যের কোটায়। জাগতিক ব্যস্ততায় আজ আমরা বড়ই আত্মকেন্দ্রিক। যেখানটায় ভোগই বড় নিয়ামক শক্তি। ফলত সমাজে আজ হত্যা রাহাজানি অস্থিরতা সুদ ঘুষ মিথ্যাচার চুগলখুরি অনৈতিকতা পাপাচার ভেজালের বেসাতি দায়িত্বে অবহেলা যেন রোজকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজ ভালো মানুষের খোঁজ পেলে যেন চমকে উঠি! এ দেশে নিয়ত ফলমূলে ফরমালিন ভেজাল প্রসাধনী জীবন রক্ষাকারী ওষুধে নকল মেশাতে হাত কাঁপে না। ওরা কারা! এদের আবাস তো আমাদের চারপাশে!

এ ধরায় সৃষ্টিকর্তা মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যা সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে বলা আছে যে, মানব সম্প্রদায় প্রভুর প্রতিনিধিত্ব করবে। যাকে স্বয়ং অধিকর্তা আশরাফুল মাখলুকাতের সম্মান দিয়েছেন। তাদের পরিচয় কেমন হওয়া উচিত? আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে সর্বদা সততা এবং সুন্দরের মাঝেই আনন্দ এবং তৃপ্তির স্বাদ খোঁজার কথা। একটা ঘটনা পর্যালোচনার মাঝেই এর সার্থক রূপায়ণ দেখা যায়। তৎকালীন আরবে এক দরিদ্র পরিবারের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। কর্তাব্যক্তি কাজের সন্ধানে বের হন এবং নিরুপায় হয়ে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং মুক্তির প্রার্থনা করেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় একটা ব্যাগের দিকে তার নজর যায়। যার মধ্যে এক হাজার দিরহাম ছিল। খুশিমনে ব্যক্তি ব্যাগটি নিয়ে বাড়িতে যান। সতী-সাবধী স্ত্রী এসব শুনে ব্যাগ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং যথাস্থানে ফেরত দেওয়ার আবদার করেন। ফিরে এসে দেখেন একজন লোক ব্যাগটি খুঁজছে। ব্যাগটি তাকে ফেরত দিলেন। অবাক করার বিষয় লোকটি দরিদ্র ব্যক্তিকে ব্যাগটি দিয়ে দিলেন এবং সঙ্গে আরও নয় হাজার দিরহাম দিলেন। লোকটি বললেন সিরিয়ার এক ব্যক্তি তার হাতে ব্যাগটি দিয়ে বলেছিলেন মসজিদে ফেলে রাখতে এবং কেউ তুলে নেওয়ার পর খোঁজার ঘোষণা পেয়ে যদি ফেরত দেয় তাকে পুরো দশ হাজার দিরহাম দেওয়ার কথা বলেন। কেননা সেই প্রকৃত সৎ এবং ভালো মানুষ। এসবে সৃষ্টিকর্তার বক্তব্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য পথ খুলে দেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করেনি। এসব ঘটনা শুনলে গা শিউরে ওঠে। আল্লাহ মহান।

সৎসঙ্গ ভালো মানুষের পূর্বশর্ত। জগৎ সংসারে আমরা কার সঙ্গে মিশছি ঘুরছি ফিরছি এসবের নজর দেওয়া সময়ের দাবি। অপসংস্কৃতির চর্চা উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে মাস্তি করা এসব সুস্থ লক্ষণ নয়। আজকাল দেখা যায় স্কুল ড্রেস পরিহিত বাচ্চারা বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ে পার্ক রেস্তোরাঁয় সময় পার করছে। অথচ আমরা এমন এক প্রজন্ম চাই যারা আলোকিত মানুষ হবে। শিক্ষার্থীদের ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলাফেরাই বলে দেয় গন্তব্য কোন দিকে! আপনার সন্তানকে যদি ভালো মানুষ করতে চান প্রয়োজন সৎসঙ্গ এবং সত্যবাদীর সোহবত। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও তা হলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো। সুরা তওবার ১১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে সত্যবাদীদের সাথি হও। মূলত এসব চর্চার মাঝেই ভালো মানুষের অবয়ব খুঁজতে হবে।

সমাজ বাস্তবতায় ভালো মানুষের বড্ড প্রয়োজন। সক্রেটিসের সদগুণই জ্ঞানের মাঝে এর সার্থকতা লুকায়িত। নিরহংকার সততা পরোপকারী মানবিক এবং সামাজিকতার তাদের মাঝেই পাওয়া সম্ভব এবং প্রভুকে হক্কুল ইবাদের মাঝেই খুঁজতে হবে। অসৎ ব্যক্তি যত বড় প-িতই হোক না কেন, সে জ্ঞানী হতে পারে না। এ জন্য সর্বদা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। যার মাধ্যমে চেতনার বিপ্লব নৈতিকতার চর্চা এবং মানবিকবোধের উন্মেষ ঘটবে। কেননা প্রভুর প্রেরিত পবিত্র কুরআনের প্রথম বক্তব্যই হলো পড়ো, তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক)। সৎ গুণাবলি অর্জনের জন্য সত্যানুসন্ধান সময়ানুবর্তী হওয়া প্রয়োজন। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের অনুধাবন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সময় এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মানুষের জন্য কিছু করা। যা কেবল ভালো মানুষের দ্বারাই সম্ভব।

আগামী নিরাপদ এবং বাসযোগ্য করার জন্য যোগ্য প্রজন্মের বিকল্প নেই। সৎ কর্মঠ এবং মেধাবীরাই আগামীর পৃথিবী শাসন করবে। এ জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রয়োজন। থেমে থাকলে চলবে না। জাগতে হবে এবং জাগাতে হবে। নেপোলিয়নের অভিজ্ঞতা বলে দেয় জীবনে অসম্ভব বলে কোনো শব্দ নেই। প্রায় সমার্থক স্বামী বিবেকানন্দের মন্তব্য জেগে ওঠো সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত থেমো না। মূলত এসবের মাঝেই সুন্দর আগামী পাব। যেখানটায় ব্যক্তিত্বের সংঘাত হানাহানি অরাজকতা অস্থিরতা অনৈতিকতা এবং পাপমুক্ত সুন্দরের দেখা মিলবে। আমরা সেদিনের অপেক্ষায়।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close