ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভাসমান আবর্জনা পড়ছে হাকালুকি হাওরে
জুড়ী নদী এখন ময়লার ভাগাড়
প্রকাশ: শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৫:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৫০৬)
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে জুড়ী নদী। বর্তমানে রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা ডাস্টবিন না থাকায় শহরের অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। এর ফলে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দূষণ। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।

এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, জুড়ীতে কামিনীগঞ্জ ও ভবানীগঞ্জ নামে দুটি বাজার রয়েছে। তার মধ্যে কামিনীগঞ্জ বাজার সরকারিভাবে ইজারাভুক্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার কমিটিকে এ বিষয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। ঈদের পরে উচ্ছেদসহ আরও কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন। তবে ভবানীগঞ্জ বাজারটি ইজারাভুক্ত না হওয়ায় এদিক থেকে তাদের চাপ সৃষ্টি করা না গেলেও প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া কাজের সুবিধার্থে দুটি বাজারকেই এক করে একসঙ্গে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর মৌলভীবাজার জেলার সহকারী পরিচালক মাঈদুল ইসলাম বলেন, এটা তো উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাজার কমিটির দেখার বিষয়। তারা একটু জোর দিয়ে দেখলেই সমাধান হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি সহজে মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির গুণাগুণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পলিথিন জলাশয় বা নদীর তলদেশে জমা হতে থাকে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পলিথিন দীর্ঘ সময়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে নানা প্রাণীর মধ্যে প্রবেশ করছে। জলাশয়ের মাছের মধ্যে এগুলো প্রবেশ করে। এভাবে একসময় মানুষের শরীরেও চলে আসে। নদীতে জমা হওয়া পলিথিন বর্ষাকালে ভেসে ভেসে হাওর এলাকায় চলে যায়। এতে হাওরের ইকোসিস্টেমের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। পলিথিন যেন কোনোভাবেই জলাশয়ের পানির সঙ্গে মিশতে না পারে। সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া জুড়ী নদী বিভক্ত করেছে ভবানীগঞ্জ ও কামিনীগঞ্জ বাজারকে। বাজার দুটি নদীর দুই পাশে অবস্থিত। নদী তীরবর্তী বাজার দুটির কোনোটিতেই নেই ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। এ কারণে বাজারের সব উচ্ছিষ্ট ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্রিজের ওপর থেকে ফেলা হয় নদীতে। এসব ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিক ও পলিথিন নদীর পানিতে ভেসে গিয়ে প্রবেশ করে হাকালুকি হাওরে। এতে নষ্ট হচ্ছে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাকালুকি হাওরের প্রবেশপথ কণ্ঠিনালা রাবার ড্যামের পাশে জুড়ী নদীর একটি শাখা। তার একপাশে চাতলা বিল, অন্যপাশে কৃষি ফসলি মাঠ। সেখানে জমা হয়ে আছে বেশকিছু প্লাস্টিক ও পলিথিনের স্তূপ। সেই স্তূপের আশপাশে প্রায়ই ভেসে ওঠে বিভিন্ন ধরনের মরা প্রাণী। এতে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। উজান থেকে ভেসে আসা এসব বর্জ্য প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। এছাড়াও জুড়ী-ফুলতলা সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচেও জমে আছে ময়লা-আবর্জনার বড় স্তূপ। এসব আবর্জনা পানিতে ভেসে হাকালুকি হাওরের ভেতরে প্রবেশ করে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাকালুকির জীববৈচিত্র্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে জুড়ী নদীর উৎপত্তি। নদীটি ফুলতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে উপজেলা সদরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিলেছে। হাকালুকি হাওরের অবস্থান মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার মোট ৫টি উপজেলাজুড়ে। ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি। ছোট-বড় ২৭৩টি বিল, ১০টি নদী ও অসংখ্য খালের সংযোগ রয়েছে হাকালুকির সঙ্গে। সরকার হাকালুকি হাওরকে পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালে। হাওরের পরিবেশ গত বেশ কয়েক বছর থেকে রয়েছে চরম বিপর্যয়ের মুখে। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তারকারী নানা ধরনের উপাদানের কারণে বর্তমানে হাওরের পরিবেশ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাজে প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির ওপর। নানা চাপে এখন পরিবেশ এমন বিপর্যস্ত।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য ও পরিবেশকর্মী লুৎফুর রহমান শাহান বলেন, দেশে ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে পলিথিনের ব্যবহার দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ! ভয়ানক এ পলিথিন বর্তমানে আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর জন্য এক বিপজ্জনক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

জুড়ী নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, প্লাস্টিক নিয়ে আমাদের বাজার কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ-কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনোমতে দোকান কিংবা মার্কেটের ময়লা-আবর্জনা প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো যেখানে-সেখানে ফেললেই হলো। সবাইকে এখনই সচেতন হতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

জুড়ী কামিনীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আম্বানী বলেন, জুড়ীর মতো বড় একটি বাজারে ময়লা ফেলার কোনো স্থান নেই। ডাস্টবিন থাকলে যারা নদীতে ময়লা ফেলছে তাদের আইনের আওতায় আনা যেত। ডাস্টবিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এভাবে ময়লা ফেলা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close