ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অবন্তিকার আত্মহত্যা, প্রশ্ন অনেক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪, ৪:৩৭ পিএম  (ভিজিট : ৩৫৮)
উচ্চ মাধ্যমিকের পর একজন শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে যে কোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অবশেষে ভাগ্যের চাকা ঘোরে অনেকেরই। সত্যি হয় স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপের সিঁড়ি। কত স্বপ্ন, কত আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাত্রা হয় নতুন এক জগতে।

আর সেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক ছেলেমেয়ে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্পর্ক হয় নতুন এক পরিবেশের সঙ্গে। সেই পরিবেশটা সম্পূর্ণ নতুন আর অচেনা। প্রতিটি ছেলে-মেয়ের চোখে-মুখে এক নির্মল সুখের হাসি। উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে স্বপ্নগুলো।

জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া পরিবারকে ছেড়ে আসে হাজার হাজার স্বপ্নদ্রষ্টা। শুধু একটাই স্বপ্ন- জীবনে অনেক দূর যেতে হবে, অনেক বড় হতে হবে। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। সব কষ্টের অবসান হবে, সন্তান মানুষের মতো মানুষ হলে। কিন্তু এখানেই কি শেষ? না; এর ভেতরের গল্পটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এই যান্ত্রিক শহরে স্বপ্নের ডানায় ভর করে থাকা জীবনগুলোর যাত্রা এত সহজ নয়। জীবনের চড়াই-উতরাই অতিক্রম করা অনেক শিক্ষার্থী আবার সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ, সঠিক বন্ধু নির্বাচনের অভাবে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে। অপরাধ জন্মাতে থাকে একের পর এক। কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো অর্থনৈতিক কারণে, পড়ালেখায় খারাপ ফলাফল, প্রেম-ভালোবাসায় বিচ্ছেদ জনিত কারণে। আর সেই অপরাধের অধিকাংশের শেষ পরিণতি হয় ‘আত্মহত্যা’। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পেছনের স্বাভাবিক কারণ হয় অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা নামক অলীক চাহিদা। পড়াশোনা করা অবস্থায় অধিকাংশ ছেলেমেয়ে জড়িয়ে পড়ে এসবে। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয়টিও জড়িত থাকে। আর যখন তার ফলাফল নেতিবাচক হয় তখনই হাজারো জীবন হতাশায় বিভোর হয়ে বেঁচে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবাদের বন্যা বইছে দিনকে দিন। অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সামনে এলেও সঠিকটা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তার আত্মহত্যার পেছনে যে প্রমাণ মেলে তাতে একজন অবন্তিকার সহপাঠী; অপরজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রক্টর। সত্যিকার দোষী হিসেবে তার প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া যায়। আর তাতেই জানা যায় অবন্তিকার আত্মহত্যার পেছনে তারা সম্মিলিতভাবে দায়ী, যা অবন্তিকাও মৃত্যুর আগে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজেই পোস্ট করে যায়। কেন এমন নির্মমতার শিকার হলো সে?

সত্য হলো সূর্যের মতো। ভোর হলেই সে আলোকরশ্মি ছড়ায় ভুবনে। তাই লুকানো সত্যকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বের করে আসল দোষীকে সামনে এনে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। ক্ষমতাবানরা যদি সমাজে এভাবে নারীদের ভোগ্যপণ্য মনে করে এবং তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের বস্তু মনে করে, তাহলে সমাজ শিগগির একটা ‘বিকৃত প্রজন্মে’ পরিণত হবে। আর তখন সমাজের নীতি-নৈতিকতাগুলোর বালাই থাকবে না। একসময় দেখা যাবে অবন্তিকার আত্মহত্যায় অভিযুক্তকারীদের মতো এই তথাকথিত শিক্ষিতরা সমাজের ‘রাঘব বোয়াল’ হয়ে সব সত্য, ন্যায়কে গিলে ফেলবে। অন্যায়ের পর অন্যায় করে সমাজকে ধ্বংস করে দেবে। নয়তো আবার কোনো অবন্তিকার জন্ম হবে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা   জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close