ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

লোকসানের বোঝা নিয়ে চলছে বিএসইসি
প্রকাশ: বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৫:২০ এএম  (ভিজিট : ৫৩২)
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই আইনটি বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নামে পরিচিত। প্রথমে শুরুতে বাংলাদেশ স্টিল মিলস করপোরেশন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও জাহাজ নির্মাণ করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬২টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিএসইসি কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে বিএসইসি নিজের উদ্যোগে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামে আরও একটি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার জনগণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-এটলাস বাংলাদেশ লি.। যার ৫১ শতাংশ শেয়ার বিএসইসির কাছে রয়েছে। বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের ৪৯ শতাংশ শেয়ার একইভাবে জনগণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ইস্টার্ন কেবলস লি. শেয়ারও জনগণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শতভাগ সরকারের মালিকানায় রয়েছে-প্রগতি ইন্ডাস্ট্রি লি., গাজী ওয়্যারস লি., জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লি., ইস্টার্ন টিউবস লি., বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লি., ঢাকা স্টিল ওয়াকর্স লি., কোরাইশী স্টিল ওয়াকর্স লি., রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., প্রিন্স আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং বাংলাদেশ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লি.।

জানা গেছে, এই করপোরেশনের অধীনে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অংশের শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হোন্ডার শেয়ার ২০১৩ সালে জাপানের হোন্ডা কোম্পানি লিমিটেডের ৭০ শতাংশ আর ৩০ শতাংশ হচ্ছে বিএসইসির। এর মধ্যে বিএসইসির ৩০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে বিএইচএলে স্থাপন করা হয়। গত ২০১৬ সাল থেকে বিএইচএল মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। আর দি জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি অব বাংলাদেশের শেয়ার ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ এখনও বিএসইসির। বাকি শেয়ারবাজারে।

জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান লোকসানের বোঝা বইছে। তবে বিএসইসির দাবি করে, লোকসান আগের তুলনায় কমছে। কিন্তু পরিসংখ্যান তা বলে না। এটলাস ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে ন্যাশনাল টিউবস, ইস্টার্ণ টিউবস, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি, গাজী ওয়্যারেস লিমিটেডের লোকসান গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান কিছুটা কমেছে। তবে কোন বিএসইসির দাবি গাজী ওয়্যারেস লিমিটেডের লাভজনকে উন্নতি হয়েছে। কারণ গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৩ লাখ লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব কোম্পানি লোকসান দেওয়ার কারণ হিসেবে ১১টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই বিষয়গুলো খোদ সংস্থাই চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাজারে নিম্নমানের পণ্যের সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতা, সিকেডি আমদানিতে অত্যাধিক সম্পূরক শুল্ক, পুরোনো যন্ত্রপাতি হওয়ার ফলে উৎপাদন কমে গেছে, একই সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, তারল্য সংকট, ডলারের বাজার মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ, তাৎক্ষণিক কাঁচামাল কেনার সীমাবদ্ধতা ও দক্ষ জনবলের অভাব।

বিএসইসির প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন লোকসানের কারণ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে-শিল্প কারখানাগুলোর পুরোনো অবকাঠামো ও প্রযুক্তি পরিবর্তনপূর্বক আধুনিকায়ন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জনবল সুষমকরণ, দক্ষ জনবল তৈরি করা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও মানসম্মত পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে গেছে।

এদিকে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-বিএসইসির উৎপাদিত পণ্য সরাসরি পদ্ধতিতে কেনার ব্যবস্থা করা। তাদের অভিযোগ হচ্ছে, সরাসরি পদ্ধতিতে কেনার সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি অফিসকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউ মানছে না। যে কারণে বিএসইসির শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাচ্ছে। এর ফলে লোকসানি শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানেই থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। বিশেষ করে পুরোনো মেশিনারিজ পরিবর্তন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা। আর এর জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর কর্তন প্রত্যাহারসহ আমদানি পর্যায়ে ট্যাক্স ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বিনা সুদে কিংবা স্বল্পসুদে ওয়াকিং ক্যাপিটাল সংস্থানের সুপারিশ করা হয়েছে।

আগামী দিনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে স্মার্ট হিসাব সিস্টেম, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য বিভিন্ন সেন্টার স্থাপন, যুগোপযোগী ক্রেতাবান্ধব ই-কমার্স সাইট তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা স্থাপন।

এখন দেখা যাক কোন প্রতিষ্ঠান কী পণ্য উৎপাদন করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কারা কী লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উৎপাদন করেছে। এটলাস বাংলাদেশ মোটরসাইকেল। ২০২২-২৩ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৬০০টি। কিন্তু উৎপাদন করেছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনামূলকভাবে কম। ন্যাশনাল টিউবস তারা উৎপাদন করে জিআই, এমএস ও এপিআই পাইপ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার টন। কিন্তু এখানেও হতাশামূলক উৎপাদন। ইর্স্টান কেবলস লি. উৎপাদন করে সিএফএল,এলইডিবাল্ব ও টিউব লাইট। 
লক্ষ্যমাত্রা ছিল সবমিলে ৬ লাখ। কিন্তু এখানেও তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। গাজী ওয়্যারেস উৎপাদন করে সুপার এনামেল কপার ওয়্যার। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ টন। এখানেও হতাশামূলক। 

জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফাকাচারিং উৎপাদন করে ট্রান্সফরমার। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৫টি। কিন্তু উৎপাদন তুলনামূলকভাব ভালো। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ বাস, ট্রাক ও জীপ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০টি। উৎপাদনও হতাশাব্যাঞ্জক। ঢাকা স্টিল ওয়াকর্স উৎপাদন করে এমএস রড। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার টন। উৎপাদন মোটামুটি ইতিবাচক।

আগামীকাল যাবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close