ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

খাবার পানির তীব্র সংকটে বিদ্রোহীরা
প্রকাশ: বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৪:৫৮ এএম  (ভিজিট : ৪১২)
মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাগুলি শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে এপারে সীমান্ত এলাকায়। গত সোমবার ভোররাত ৩টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সীমান্তের রাইটক্যাম্প, বাইশফাঁড়ি, চেরারমাঠ ও জামছড়ি গ্রামসহ ৪ পয়েন্টে এ গোলাগুলির শব্দ শোনেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া জান্তাবাহিনীর একের পর এক বিমান হামলায় রাখাইন রাজ্যের জেলা শহরের দূরবর্তী ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ওপারের বিদ্রোহীদের চৌকিগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে সীমান্তের বাইশফাঁড়ি থেকে পাইনছড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ৭২ কিলোমিটার এলাকায় গ্রীষ্মের তাপদাহে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির কয়েক হাজার সদস্য বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। তারা সীমান্তের ছোট-বড় ছড়া, কুয়া ও শূন্যরেখার আশপাশের বাঁধ থেকেও খাবার পানি সংগ্রহ করছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।

সীমান্তের চেরারমাঠের সৈয়দ নূর, ওয়ালিদংয়ের শফিক মাঝি ও জামছড়ির শাব্বির আহমদ বলেন, বিদ্রোহী আরাকান আর্মি দুটি সমস্যায় পড়েছে। প্রথমত জান্তা সরকারের বিমান হামলার ভয়, দ্বিতীয়ত গরমে খাবার পানির সংকট। রাখাইন রাজ্যের জেলা শহরের দূরত্ব ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ওপারের চৌকিগুলোতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তেমন ব্যবস্থা ছিল না আগে থেকেই। জান্তা বাহিনীকে তাড়িয়ে বিদ্রোহীরা এ চৌকিগুলো দখলে নিলেও তা নতুন করে কিছু করার সুযোগ পায়নি। উভয় সংকটে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ৭০০ নারী সদস্যকে এখন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে বিশেষ তাঁবুতে রেখে পুরুষরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। এখানেও তারা পানীয় জলের সংকটে দিন যাপন করছে।

তারা আরও জানান, ৪৪ পিলারের ওপারের পুরান মাইজ্জা সাবেক বিজিপি ক্যাম্পে থাকা সীমান্ত চৌকি থেকে সকালে এক দফা, বিকালে আরেক দফা গোলাগুলির শব্দ শোনেন চেরারমাঠের লোকজন। জামছড়ির জাকারিয়া জানান, রাত ১০টায় জামছড়ি পয়েন্টে নিয়মিত গোলাগুলির শব্দ তাদের কানে আসে। তুমব্রুর বাসিন্দা হাফেজ আবদুল হক বলেন, সোমবার সকাল ১০টার পর বেশ কিছুক্ষণ ধরে তুমব্রু রাইটক্যাম্প ও বাইশফাঁড়ির ওপারে মিয়ানমার অংশ থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে।

ঢেকুবুনিয়ায় লাল পতাকা উড়ছে : এদিকে সীমান্তের ৩১ পিলারের ওপারে ঢেকুবুনিয়া সাবেক বিজিপি ক্যাম্পের অদূরে লাল পতাকা উড়তে দেখেছেন সৈয়দ কাশেম নামে ঘুমধুমের এক বাসিন্দা। এতদিন এ পতাকাটি দেখেননি তিনি। গত ৩১ মার্চ সকাল থেকে এ পতাকা উড়তে দেখে অনেকে বলেন, এখানে কিছু একটা হচ্ছে। হয় জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা নতুবা জনসাধারণের চলাচল সংকুচিত করতে সতর্কতার জন্য। স্থানীয়রা বলেন, বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ঢেকুবুনিয়ার ব্যাটালিয়নটি দখলে নেওয়ার পর এই প্রথম এপারে লাল পতাকা উড়তে দেখেন তারা। এটি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মিনবিয়া টাউনশিপে বিমান হামলা : মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের মিনবিয়া টাউনশিপের রোহিঙ্গা টাড়াপাড়ায় মিয়ানমার সেনারা গত ১ এপ্রিল গভীর রাত দেড়টা থেকে এমআই-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা করে। বিমান হামলায় ২৩ জন নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নিরীহ রোহিঙ্গা নিহত এবং অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এ পাড়ায় গত ১৮ মার্চ মিয়ানমার সেনারা একই কায়দায় বিমান হামলা করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। ওই রোহিঙ্গা পাড়ায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গার বাড়িঘর রয়েছে বলে জানা যায়। রাখাইন সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি ওই পাড়ায় অবস্থান নিলে জান্তা সেনারা সে গ্রামে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে বলে সূত্রে জানা যায়।

বিপুল গোলাবারুদ সংগ্রহ জান্তা বাহিনীর : রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলায় গুরহ নৌবাহিনীর সাবস্টেশন গত ১ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে নৌবাহিনীর একটি শিপে করে ইয়াংগুন সেনাসদর থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সেনা সদস্য নিয়ে এসেছে বলে জানা যায়। মংডু কাইন্ডাপাড়া ৫ নং বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদরে সেনারা কঠোর নিরাপত্তায় গোলাবারুদগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।

মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশসহ অন্যান্য প্রদেশে গত ২৮ মার্চ থেকে গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত সেনা ও জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ-যুদ্ধে ৮১ জন সেনা সদস্য নিহত এবং বিদ্রোহী গ্রুপের ২২ জন নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা আবদুল কাদের মীর আহমদ, আবু ছিদ্দিক ও মৌলভী অলি আহমদ এসব তথ্য দেন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close