ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নাব্য সংকট ও দখলে মৃতপ্রায় লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদী
প্রকাশ: সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪, ১০:৩৪ এএম  (ভিজিট : ৫৮৮)
নাব্য সংকট, দখলদারিত্ব ও প্রভাবশালীদের বাঁধের কারণে পলি জমে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদী। ফলে একসময়ের খরস্রোতা ভুলুয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। দীর্ঘদিন খনন না করায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে যায়, এতে ব্যাহত হয় এ অঞ্চলের চাষাবাদ। নদীর ওপর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জল বদ্ধতা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য। এ অঞ্চলের  চাষাবাদে গতি ফেরাতে দখলদার উচ্ছেদসহ দ্রুত ভুলুয়া খননের দাবি স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। ঐতিহ্যবাহী এ নদী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এক সময় ভুলুয়ার প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০০ মিটার, দখল-দূষণের ফলে বর্তমান প্রস্থ মাত্র ৮৫ মিটার। পলি জমি তলদেশ ভরাট হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি হেঁটেই পার হওয়া যায়। পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। ফলে কমে গেছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় কৃষি উৎপাদন।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভুলুয়া নদীতে এখন আর জোয়ার-ভাটা নেই। এতে শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। আবার প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুই মৌসুমেই আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় স্থানীয়দের।

কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা গ্রামের কৃষক সালা উদ্দিন ,আবদুল  সাত্তার ও স্থানীয় রবিউল ইসলাম জানান, একসময় এ ভুলুয়া নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে আমিষের চাহিদা মেটানোসহ জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। বড় বড় সাম্পান চলাচল করত নদীটির বুক দিয়ে। অথচ প্রভাবশালীরা এখন নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে দখল করে রেখেছে। যার কারণে এখন আর নদীতে নেই জোয়ার-ভাটা। আবার বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় নদীর দুই তীরের বাসিন্দাদের।

কমলনগরের স্থানীয় সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম  জানান, ভুলুয়া নদীতে পানি না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষককে। এতে ব্যাহত হয় ইরি-বোরো চাষাবাদ। খালি পড়ে থাকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদ ও দ্রুত নদীটি খননের উদ্যোগ নিতে সরকারে কাছে দাবি জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মানুষের দুঃখ এ ভুলুয়া নদী। নদীটি খননের উদ্যোগ নিলে এ অঞ্চলের কৃষিকাজে আমূল পরিবর্তন আসবে। ভাগ্য বদলাবে হাজারো কৃষকের।’ ঐতিহ্যবাহী ভুলুয়া নদীর আগের জোয়ার-ভাটায় রূপ দিতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজলে এলাহী শামীম জানান, নদী খননের অভাব ও অবৈধ দখলদারদের কারণে ব্যাহত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, অবৈধ দখলদার যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুলুয়া নদীর প্রমত্তা ভাব ফিরিয়ে আনার জন্য একটি ডেলিকেটেড প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার বলে তিনি জানান ।

তবে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহেমদ জানান, ভুলুয়া নদীর ১৮ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য এরই মধ্যে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই নদী খননের কাজ শুরু করা হবে। তাছাড়া দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হবে।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close