ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অপরিপক্ব তরমুজে সয়লাব বাজার, চড়া দামে বিক্রি
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ৫:০৮ পিএম আপডেট: ২৮.০৩.২০২৪ ১:২৩ এএম  (ভিজিট : ১৩৯২)
দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির হাট-বাজারগুলোতে তরমুজে সয়লাব হয়েছে। তবে বাজারে তরমুজের আমদানি থাকলেও তার বেশিরভাগ পরিপক্ক নয়। কাটার পর ভেতরে সাদা-লাল রং দেখা গেলেও এখনো মিষ্টি স্বাদ আসেনি পুরোপুরি। ফলে এসব অপরিপক্ব তরমুজ চড়া দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এসব তরমুজ পিস হিসেবে নিতে গেলে দাম চাওয়া হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। উচ্চবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে থাকলেও মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে রয়েছে। আর নিম্নবিত্তরা তো তরমুজের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে। 

ঝালকাঠি জেলায় নদী তীরবর্তী বেলেমাটির ৭৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন রাজাপুরের ৪ হেক্টর জমিতে হয়েছে। এরপরে নলছিটি উপজেলার ২ হেক্টর, সদর উপজেলার ৫ হেক্টর এবং কাঠালিয়া উপজেলার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। ঝালকাঠির জেলায় চাহিদার তুলনায় তরমুজ উৎপাদন খুবই নগণ্য। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার হাট-বাজারগুলোতে আমদানি হয়। 

তরমুজ ক্রেতা আরমানুজ্জামান বলেন, তরমুজ দোকানের সহকারী বিক্রেতা আমাকে বলল, এই তরমুজটা নেন। প্রধান বিক্রেতা খানিকটা চমকে ওঠার ভঙ্গিতে বলল, স্যারকে ওটা দেয়া যাবে না এদিকে রাখ। এরপর সে দুটো তরমুজ হাতে নিয়ে থাপ্পড় দিয়ে রেখে দিল। তৃতীয় নম্বরটা তরমুজে থাপ্পড় দিয়ে তার সহকারীকে বলল, এটা প্যাকেট করে দে। 

বিক্রেতাদের এই সব স্যার (.... ভাই) সুলভ আচরণ সব সময় ভয় লাগে, হয় দাম বেশি রাখবে, না হয় জিনিস খারাপ দিবে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলা চলে খানিকটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম দাম কতো! তিনি বললেন, স্যার আপনার থেকে বেশি রাখব না, আপনি দেন! মহাবিপদ কতো দিব সেটা তো বলবে! স্যার পাঁচশ টাকা দেন। এবার জানতে চাইলাম, তরমুজ ভালো হবে তো! আপনি নিশ্চিন্তে নিয়ে যান, নোয়াখালীর তরমুজ, ভিত্রে সিন্দুরের মতো লাল! বাসায় নিয়ে কাটার পরে ভেতরের সাদায় কেবল লাল বর্ণ ধরেছে। এখনও পুরোপুরি লাল হয়নি। মিষ্টিও আসতে শুরু করেনি। 

তরমুজ কেনার ব্যাপারে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস রায়হান জানান, তরমুজ কিনতে গেলে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে তরমুজের গায়ে সাদা দাগ আছে কিনা! অপেক্ষাকৃত ছোট ও বাঁকা তরমুজ মিষ্টি ও রসালো হয়না। তাই তরমুজ কেনার সময় গোল বা ওভাল শেপের তরমুজ কিনবেন। তরমুজ কেনার আগে হাতে নিয়ে দেখবেন যদি ভারী হয় তবে কিনুন। হালকা বা ফাঁপা লাগে তবে সেটি কিনবেন না। তরমুজের গায়ে একটি অংশ হলদে রঙের হলে সেটা কিনবেন। তরমুজের গায়ে সাদা সাদা দাগ থাকলে সেই তরমুজ কিনবেন না। তরমুজের গোঁড়ায় শুকিয়ে যাওয়া অংশ থাকলে বুঝবেন সেটি ঠিক মতো পেকেছে। তাই এটি কেনা যায়। তরমুজ কেনার সময় টোকা দিয়ে দেখুন। যদি ভারী শব্দ আসে তবে কিনুন। যদি শব্দ অতিরিক্ত ভারী হয় তাহলে কিনবেন না বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, এখন মোকামে তরমুজের সরবরাহ কম, দাম বেশি। বরিশাল অঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাতে এবার প্রচুর তরমুজ হয়েছে। তবে এখনো মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় সব এলাকার তরমুজ আসছে না। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকায় এসব অপরিপক্ব তরমুজগুলোয় তাদের বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুন ইসলাম জানান, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। মে মাস জুড়ে মাঠে তরমুজ থাকে। মে মাস হলো ভরা মৌসুম। পরিপক্ক তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র মাস বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ হয়। কিন্তু চাষিরা দামের কারণে আগেভাগেই অপরিপক্ব তরমুজ তুলে বেশি লাভের আশায় বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় নদী তীরবর্তী বেলেমাটির ৭৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন রাজাপুরের ৪ হেক্টর জমিতে হয়েছে। এরপরে নলছিটি উপজেলার ২ হেক্টর, সদর উপজেলার ৫ হেক্টর এবং কাঠালিয়া উপজেলার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে বলেও জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। 

বাজারের ফল ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, এখনো তরমুজের মৌসুম আসেনি। রোজার কারণে চাষিরা আগে ভাগে তরমুজ তুলে ফেলছে। এখন বাজারে যে তরমুজগুলো দেখা যাচ্ছে, তা আকারে ছোট, ৩ থেকে ৫  কেজির মধ্যে বেশি। বড় তরমুজ নেই বললেই চলে। এসব তরমুজের বেশিরভাগই অপরিপক্ব। যে কারণে অন্যান্য বছরে এ সময়ে একশ থেকে দেড়শ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এ বছর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। রমজান মাস হওয়াতে ক্রেতারাও বাধ্য হয়ে কিনছে।

মিরাজ হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, রোজা বলেই বাজারে তরমুজ কিনতে আসলাম। তবে বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। তাছাড়া তরমুজগুলো অপরিপক্ব। বেশি বড় হয়নি। বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে। সব দোকানেই একই দাম। 

আরেক ক্রেতা রোজিনা ইসলাম বলেন, ৩০০ টাকায় আনুমানিক ৪ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনেছি। দামটা অনেক বেশি। দোকানদার একটু কমও রাখল না। বাড়ির বাচ্চারা বায়না ধরছে তরমুজ খাবে কিছু করার নেই। যত দামই হোক কিনতে হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে বাজার মনিটরিং করা গেলে তরমুজের দাম স্বাভাবিক থাকতো।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, রমজানের শুরু থেকেই আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আমরা যখন বাজার মনিটরিং করেছি তখন তরমুজের বিষয়টিও মাথায় রাখছি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি তরমুজের বাজারেও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি এবং বিক্রেতাদের সতর্ক করছি। পাশাপাশি ক্রেতাদেরকেও অপরিপক্ব তরমুজ কিনতে নিরুৎসাহিত করছি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  অপরিপক্ক তরমুজ   সয়লাব বাজার   চড়া দামে বিক্রি   ঝালকাঠি  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close