ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভ্যান চালিয়ে জীবনের চাকা ঘোরান ছবেদা বেগম
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ২:৫৬ এএম  (ভিজিট : ৬৫৪)
বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ ছবেদা বেগম। বয়স এখন তার প্রায় ৭০ বছর। তবুও কারও কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চান না তিনি। কোনোভাবেই চাননি মানুষের দুয়ারে গিয়ে হাত পেতে সাহায্য নিতে কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি করতে। তাই তো এ বয়সেও ভ্যান চালিয়ে জ্বালানি বিক্রি করে জীবনের চাকা ঘোরাচ্ছেন দুঃখিনী ছবেদা বেগম। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে জীবনের ঘানি টেনে চলেছেন নাটোর শহরতলির মদনহাট মধ্যপাড়ার এই বাসিন্দা। স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুকন্যাকে নিয়ে ছবেদার ৪৫ বছরের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। মেয়েটিও অল্প কিছুদিন আগে মারা গেছে। এ অবস্থায় ভ্যানের চাকার সঙ্গে অসহায় ছবেদার জীবনও যেন কষ্ট আর দরিদ্রতার মাঝে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। 

সরেজমিনে সম্প্রতি মদনহাট মধ্যপাড়ায় গেলে ছবেদা বেগমকে দেখা যায় ভ্যান চালিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বালানি (শুকনা গোবর) বিক্রি করতে। জীর্ণশীর্ণ শরীর। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ। তবুও তার যতটুকু শক্তি তা দিয়েই ‘প্যাডেল’ করে ভ্যান চালিয়ে নিত্যদিন ছুটে চলেন তিনি। এ সময় আলাপ হয় জীবনযোদ্ধা ছবেদা বেগম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে।

আলাপকালে ছবেদা বেগম সময়ের আলোকে বলেন, ‘বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখনও ভ্যান টেনে নিয়ে যেতে হয়। খুব কষ্ট হয়। তবুও কষ্ট করেই যাই। ভিক্ষা করে বাঁচতে চাই না। বিধবা ভাতার যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। কী করব? ভ্যান চালিয়ে জ্বালানি (শুকনা গোবর) বিক্রি করে জীবন পার করছি।’ কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা দেলবর আলীর সঙ্গে।

তিনি জানান, ‘প্রায় ৭০ বছর বয়সি ছবেদা বেগম সম্পর্কে আমার চাচাতো বোন। ভ্যান চালিয়ে অজপাড়াগাঁয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনা গোবর কিনে পরে তা বাজারে বিক্রি করেন। এতে সারা দিনে ১০০ কিংবা ২০০ টাকা আয় করেন। এই আয় দিয়ে জীবনযাপন, ওষুধপত্রসহ সবকিছু করতে হয় তাকে। এত অভাব সত্ত্বেও তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে যাননি। পরিশ্রম করে বেঁচে আছেন। রোদ-বৃষ্টি কিংবা শীত-গরম, এসব তার কাছে একই রকম। নিজের জায়গা জমিও নেই।বসবাস করেন গোদাই নদীর পারে, ছোট্ট ঘরে। থাকেন নদীর পাশে সরকারি জায়গায়। গোবরের গন্ধের কারণে সেখানেও লোকজনের গালমন্দ শুনে থাকতে হয় তাকে। একমাত্র মেয়ে ছিল, সেও মারা যাওয়ার পর মেয়ের ঘরের নাতি ও নাতবৌকে সঙ্গে নিয়ে কোনোমতে জীবন চালাচ্ছেন ছবেদা বেগম। 

ছবেদা বেগমের নাতি দিনমজুর শাহীন জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগে নানা আক্কাস আলী (ছবেদার স্বামী) মারা যান। তারপর থেকে একটানা ৪৫ বছর ধরে শুকনো গোবরের জ্বালানি বিক্রি করে আসছেন। বাসাবাড়ি থেকে কিনে নিকটস্থ হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। আগে মাথায় করে এসব জ্বালানি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন, এখন কয়েক বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে বিক্রি করেন। আমার মা (ছবেদা বেগমের মেয়ে) কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। আমি দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করি তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এই বয়সে নানিকেও ভ্যান চালিয়ে জ্বালানি বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আমার জন্যও খুব কষ্টদায়ক।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি মেম্বার) সোহাগ মিয়া সময়ের আলোকে বলেন, অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সংগ্রামী নারী ছবেদা বেগম। আগে মাথায় করে ওইসব জ্বালানি নিয়ে বিক্রি করতেন। এসব কষ্ট দেখে আমরা গ্রামের লোকজন মিলে ওই ভ্যানটি কিনে দিই। এ ছাড়া আমি তাকে বিধবাভাতার কার্ড করেও দিয়েছি। কিন্তু এই সামান্য টাকায় তার চলতে কষ্ট হয়, আমরা বুঝি। ছবেদার জন্য স্থায়ী বসতবাড়ি এবং কিছু অর্থের প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে নাটোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু নাসের ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, বৃদ্ধা ছবেদা বেগমের বিষয়টি ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। তাকে এরই মধ্যে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ আর্থিক সহায়তার বিষয়ে ছবেদা বেগমকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close