ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক ভাবনায় শেখ হাসিনার দীর্ঘ পথ পরিক্রমা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪, ৭:৪৪ পিএম আপডেট: ২৬.০৩.২০২৪ ৭:৫৩ পিএম  (ভিজিট : ১৩৩১)
শাবিপ্রবি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

শাবিপ্রবি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি, সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে অবদান রেখেছেন অর্থনীতিতে। বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছেন, তার কন্যা সেটিই করেছেন। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটার বিস্তরণ ঘটাচ্ছেন মন্তব্য করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ।

৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষের কল্যাণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন নিয়ে কথা দৈনিক সময়ের আলোর সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল হাসান রিজভী।

প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কেমন ছিল?

উত্তর: রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দারিদ্র্য দূরের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার, শিল্প বিকাশে নয়া উদ্যোগ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান, কৃষির আধুনিকায়নে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ, সমবায় চেতনা বিকাশে শুরু করেছিলেন নানা কর্মযজ্ঞ। ভঙ্গুর অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারে সুচিন্তিত পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধু সেই সত্য বুঝতে পেরেছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তিনি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করলেন। তাদের দায়িত্ব দেয়া হলো, সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণের। তারা প্রণয়ন করেন দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭২-৭৬)। এটি নিছক একটি পরিকল্পনা দলিল ছিল না, ছিল স্বপ্ন পূরণের পদক্ষেপ।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের একচোখা অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান কেমন ছিল?

উত্তর: পাকিস্তানের একচোখা অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সদা সচেতন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, এই বৈষম্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মাত্রার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মাত্রাও ছিল। আর তাই সে সময় তিনি পাকিস্তান সরকারের ‘ফেডারেল কন্ট্রোল অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাক্ট’-এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এই আইনের মাধ্যমে শিল্প খাতের নিয়ন্ত্রণ প্রাদেশিক সরকারকে পাশ কাটিয়ে পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল বলে তিনি মনে করতেন। পাকিস্তানে আমলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল ২২টি পরিবারের হাতে। বঙ্গবন্ধু এই ভয়াবহ বৈষম্যমূলক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের পরপর দেশ যে একটা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবেই অনুধাবন করেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি অসংখ্য বাধা মোকাবেলা করে সাফল্য পাওয়ার যে সক্ষমতা এ দেশের জনগণের রয়েছে সে সত্যটিও তিনি জানতেন। 

প্রশ্ন: কৃষি অর্থনীতিতে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি কেমন ছিল?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসনভার গ্রহণের সময় দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল কৃষিখাত নির্ভর। আর সেই সিংহভাগ কৃষকের কল্যাণেই তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ এটা কেবলই একটা স্লোগান ছিল না, ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি। মুক্তিযুদ্ধের পর ২২ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। জমির সকল বকেয়া খাজনা মওকুফসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। পরিবার প্রতি সর্বাধিক ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা নির্ধারণ করেন। পাকিস্তানামলে ১০ লক্ষ কৃষকের বিরুদ্ধে ঋণের সার্টিফিকেট মামলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সরকার এসব ঋণী কৃষকদের মুক্তি দেন।

প্রশ্ন: তৎকালীন বৈশ্বিক রাজনীতি এবং বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সচেতনতা কেমন ছিল?

উত্তর: বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তি চেতনা বুঝতে হলে অবশ্যই তৎকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝতে হবে। পৃথিবী তখন দুটি ব্লকে বিভক্ত ছিল, একদিকে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া, চীন অন্যদিকে পুঁজিবাদী শক্তি আমেরিকা, বঙ্গবন্ধু কোন ব্লকেই যোগ দেননি। তিনি এ ভূখণ্ডের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, মাটির গঠন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী স্বতন্ত্র একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এটা শুধু রাজনীতিবিদদের কাজ না, একজন দার্শনিকের কাজ। কিন্তু নানা কারণেই সেগুলো কিছু বাঁধার সম্মুখীন হয়।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন ও শেখ হাসিনার কর্মযজ্ঞের ধরন কেমন?

উত্তর: বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে তারই নির্দেশিত পথে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছেন, তার কন্যা সেটিই করেছেন। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটার বিস্তরণ ঘটাচ্ছেন। সঠিক পথেই তিনি সেটা করছেন। জাতির পিতা উন্নয়ন ভাবনাকে ধারণ করেই তারই রক্ত এবং আদর্শের উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, বাংলাদেশকে আজ বিশ্ববাসী সম্মান করে, বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার। মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এর পর আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা পতাকা আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে উড়বে বিশ্বের বুকে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  শাবিপ্রবি   অর্থনীতি বিভাগীয় প্রধান   অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ   সাক্ষাৎকার  




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close