ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইসলামে মানুষের স্বাধীনতা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪, ৩:৪২ এএম আপডেট: ২৬.০৩.২০২৪ ৩:৫৫ এএম  (ভিজিট : ১১০১)
মহান আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা ও মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে মানুষ সৃষ্টির পরবর্তী যে ঘটনাপ্রবাহ বিবৃত হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে পাই মানুষ তার জীবনের উন্মেষ পর্বেই স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করেছিল। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.)। আল্লাহ তাকে জান্নাতে সৃষ্টি করেছিলেন। পরবর্তীতে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। তিনি যখন জান্নাতে বসবাস করছিলেন, সে সময়ে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে কুরআনে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যেখান থেকে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করো’ (সুরা বাকারা : ৩৫)। এখান থেকেই মানব জীবনে স্বাধীনতার সূচনা। মানুষ তাই স্বাধীনতাপরায়ণ, মুক্তি ও স্বাধীনতার চাহিদা তার স্বভাবজাত। মানুষ মুক্তি চায়, মুক্ত ও স্বাধীন থাকতে চায়। পরাধীনতার শৃঙ্খলে তার প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষের স্বভাবের এই মুক্তিপ্রিয়তা একটি প্রয়োজনীয় প্রেরণা।

জানা থাকা দরকার, স্বাধীনতা মানে কী? স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছাধীন ও যেকোনো কাজের সম্পন্নতা। মানুষের স্বাধীনতা ও কাজের সম্পন্নতা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সমর্পিত ও তাঁর অনুগত বান্দা হয়ে থাকার মধ্যেই নিহিত। অন্যথায় মানুষকে অনুগত হতে হবে তারই মতো অন্য কোনো মানুষের। সব মানুষ যখন এক স্রষ্টার ছায়ায় সমর্পিত হবে, তখন তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই সমান ও স্বাধীন থাকবে। সাহাবি হজরত রিবয়ী ইবনে আমের (রা.)-এর কণ্ঠেও এ সত্য ধ্বনিত হয়েছিল। পারস্য সেনাপতি রুস্তমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন-‘আমরা এই ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছি মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে স্রষ্টার দাসত্বে নিয়োজিত করার জন্য, পৃথিবীর সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দিয়ে পৃথিবীর প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসার জন্য এবং সব ধর্ম ও মতবাদের জুলুম-অবিচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের সাম্য ও সুবিচারের ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য’ (হায়াতুস সাহাবা)। তার এ বক্তব্য থেকে স্বাধীনতার স্বরূপ সুস্পষ্ট হয়।

স্বাধীনতা মানে তাই স্বেচ্ছাচারিতা নয়, অন্যায় অপরাধের স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা মানে ‘যা খুশি তাই করা নয়’, এটা তো ‘পশুবৃত্তিক স্বাধীনতা’। বরং স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থ-প্রবৃত্তির দাসত্ব-শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সমীপে নিজেকে সমর্পণ করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করে সফলকাম হওয়া। স্বাধীনতা অসীম নয়, স্বাধীনতা স্বীয় সীমারেখায় সসীম। আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে যে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন সেটিও অসীম ছিল নয় বরং একটি সীমারেখায় আবদ্ধ ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু এই বৃক্ষের কাছেও যেয়ো না, তা হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা বাকারা : ৩৫)

মানুষের স্বভাবে আল্লাহ স্বাধীনতার যে চাহিদা দিয়েছেন, তা পূরণের অধিকারও দিয়েছেন। ইসলাম তাই বিবেকের স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভৌগোলিক স্বাধীনতা এবং শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির স্বাধীনতাকে স্বীকার করে। ইসলাম বিবেকের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারণ করেছে, ‘ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই’ (সুরা বাকারা : ২৫৬)। ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের অনুমতি দেয়নি। মহান আল্লাহর অভিপ্রায় হচ্ছে মানুষ মুক্ত বিবেকে আন্তরিকভাবে সত্য ধর্মকে গ্রহণ করুক।

অন্তর ও বিবেক যে বিষয়টিকে সঠিক ভাবছে সে বিষয়টির অবাধ প্রকাশাধিকার না থাকলে বিবেকের স্বাধীনতার কোনো মানে থাকে না। তাই ইসলাম মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। মহানবী (সা.) বারিরাহ (রা.)-কে মুগিস (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদে বারণ করলেন। বারিরাহ (রা.) নিবেদন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! একি আপনার আদেশ নাকি পরামর্শ? রাসুল (সা.) বললেন, নির্দেশ নয়, পরামর্শ। বারিরাহ (রা.) বললেন, তা হলে আমি আপনার অভিমত গ্রহণ করা না করার ব্যাপারে স্বাধীন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাসুল (সা.)-এর সে পরামর্শটি গ্রহণ করেননি এবং এ কারণে রাসুল (সা.) তার প্রতি মনোক্ষুণ্নও হননি (বুখারি : ৫২৮৩)। রাসুল (সা.) মুসলিম সমাজে যথাযথভাবে প্রতিটি মানুষের স্বতন্ত্র স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সর্ব মুহূর্তে সত্য কথা অকপটে বলার জন্য উৎসাহ দান করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়সঙ্গত কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।’ (আবু দাউদ)

ইসলামি সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা ব্যাপক তা তাঁর খলিফাদের সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা থেকেও উপলব্ধি করা যায়। ওমর (রা.) কর্তৃক বিয়ের মোহরানা নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে এক মহিলার বলিষ্ঠ মত প্রকাশ ও যুবক কর্তৃক মসজিদে কাপড়ের হিসাব চাওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, সে যুগে মত প্রকাশের কী অবাধ সুযোগ ছিল। এভাবেই মানবজীবনে স্বাধীনতার সব অনুষঙ্গের সঠিক ধারণা ও প্রয়োগনীতি আমরা ইসলামে পাই।

কখনো কখনো বিকৃত মস্তিষ্কের অবিবেচক, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারী মানুষ মানবকুলের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে চায়। সেই স্বৈরাচারী দাম্ভিক শক্তিকে প্রতিহত করতে ইসলামই প্রেরণা জোগায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় ফেরাউন পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। সে তাদের একটি শ্রেণিকে দুর্বল ভেবেছিল এবং তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত ও কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখত। বাস্তবিকই সে ছিল নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী। আর আমার অভিপ্রায় ছিল অবদমিতদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদের নেতা বানিয়ে দেব ও ফেরাউন, হামান এবং তাদের বাহিনীকে (লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের) সেসব বাস্তবতা দেখাব যা থেকে তারা নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছিল’ (সুরা কাসাস : ৪-৫)। 

আয়াতের মর্মার্থ হলো, শোষিত ও মজলুমদের জাগিয়ে তোলা হবে এবং স্বৈরাচারী দাম্ভিক শক্তিকে প্রতিহত করা হবে। ইসলামের এ মহৎ চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একাত্তরে বাংলার মানুষের সশস্ত্র হওয়া, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জন। তাই ইসলামে স্বাধীনতা লাভের যে মর্ম ও উদ্দেশ্য সেটিও আজ বাস্তবায়ন করতে হবে সর্বতোভাবেই। তা হলো-সমাজে সর্বপ্রকার অসাম্য-অনাচার দূর করে ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা এবং সত্যগ্রহণ ও সত্যচর্চার অধিকার নিশ্চিত করা। তাই আমাদের কর্তব্য হলো ইসলামের দিকে ফিরে আসা। পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হওয়া। তা হলেই আমরা হব প্রকৃত অর্থেই মুক্ত ও স্বাধীন।

সময়ের আলো/আরএস/ 








https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close