ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাক বাজারে মন্দা
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪, ৩:১৬ এএম  (ভিজিট : ১০২২)
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম গার্মেন্টস পল্লী কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে। দেশের পোশাকের মোট চাহিদার বড় অংশই সরবরাহ করেন এখানকার উৎপাদকরা। তবে এবার কাক্সিক্ষত বেচাকেনার দেখা পাচ্ছেন না এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পোশাকের দাম বৃদ্ধি ও আর্থিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাবে সারা দেশের দোকানিদের আনাগোনা কমেছে। পাইকাররা জানিয়েছেন, এলসি বিড়ম্বনার কারণে এবার আমদানিও কমেছে। আর তৃণমূলের দোকানিদের দাবি, ভাটা পড়েছে উৎসবের কেনাকাটায়। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে আর্থিক টানাপড়েনের ধাক্কা লেগেছে সর্বত্র। তাই কমেছে পোশাকের চাহিদা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদে স্বাভাবিক সময়ের বেচাকেনার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৭-৮ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রির লক্ষ্য ব্যবসায়ীদের। তবে এ বছর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আর্থিক টানাপড়েনের কারণে বেচাকেনা অনেকটা কম এই পোশাক পল্লীতে। এখানে রয়েছে ২০ হাজারের বেশি শোরুম। পাশাপাশি আছে ৫ হাজারেরও বেশি কারখানা।

এখানে পাইকরি বেচাকেনার পাশাপাশি বিদেশ থেকে পোশাক আমদানি আর কারখানাগুলোতে নিজেদের ডিজাইন করা পোশাক তৈরির কাজে রাত-দিন জমজমাট থাকে এই পোশাক পল্লীটি। কারখানাগুলোতে কাজ করছেন ২ লাখেরও বেশি শ্রমিক। ঈদ এলে এই সংখ্যা বাড়ে আরও ১ লাখ। কারখানা সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ বছর বেচাকেনায় মন্দা তাই বাড়তি আয় নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত সার্বিক মূল্যস্ফীতি, ডলার দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, এলসি খুলতে না পারা, মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ভর মৌসুমে জমে ওঠেনি ঈদকেন্দ্রিক পাইকারি বেচাকেনা। এ পরিস্থিতিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঈদকে টার্গেট করে যে পরিমাণ মাল মজুদ করেছেন, তার অর্ধেকও বেচতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কিত তারা।

শেখ সাদী গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক হোসেন জানান, সুতা, ফেব্রিক্স ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম একটু বেশি। তবে কম মুনাফায় বিক্রির কারণে বাজারে আমাদের পোশাকের চাহিদা রয়েছে।

কাজল পাঞ্জাবির দোকানি মাহবুব আলম বলেন, গতবারের তুলনায় এবারের বিক্রি অনেক কম। এর আগের বছরগুলোতে পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু হতো শবে বরাতের আগে থেকে। কিন্তু এবার বেশ কয়েকটি রোজা হয়ে গেল কিন্তু বিক্রি নেই। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, মানুষের জীবন চালানোই কঠিন। সেখানে মানুষ কাপড় কিনবে কীভাবে।

বিদেশি পোশাক বিক্রেতা মো. তুহিন জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি জটিলতার কারণে এবার বিদেশি পোশাকের আমদানি কমেছে। আমার পোশাক আটকে আছে পোর্টে। পোশাক হাতে না পেলে বিক্রি করব কীভাবে।

সুনামগঞ্জ থেকে পোশাক নিতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী মো. জহির হোসেন জানান, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম গার্মেন্টস পল্লী কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে। এখানে সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। ডিজাইন ও চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের দামও তুলনামূলক কম। তাই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই মার্কেট থেকে পোশাক নিয়ে যাচ্ছি। এ বছর পোশাকের দাম একটু বেশি। গত বছর যে পোশাক এক হাজার টাকায় কিনেছি। এ বছর তা তিনশ টাকা বেশি দিয়ে নিতে হচ্ছে।

কাপড়ের পাইকারি ক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, আমি নওগাঁ থেকে কাপড় নিতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখলাম শার্ট-প্যান্টের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। যে শার্ট-প্যান্ট গত বছরে নিয়েছি ৭০০-৮০০ টাকা সেই একই মানের কাপড় এ বছর ১০০০-১২০০ টাকা। গত বছরের থেকে এ বছর খুচরা বিক্রিও কম হচ্ছে।

গাজীপুর থেকে শার্ট, প্যান্ট ও শাড়ি কিনতে এসেছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, প্রতি পিস পাঞ্জাবি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে বাড়লে বিক্রিও কমে যাবে।

এদিকে একাধিক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পোশাক নিয়ে খেয়া পারাপারের সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন খেয়াঘাট ইজারাদাররা। বস্তা প্রতি জোরপূর্বক অতিরিক্ত ১৫০-২৫০ টাকা আদায় করছেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বস্তা ফেলে দেওয়া হয়। ঘাট পার হতে দেন না। তবে ঘাট ইজারাদারদের দাবি, তারা তালিকা অনুযায়ী টাকা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত কোনো টাকা তারা আদায় করেন না। বস্তা প্রতি ২০-৩০ টাকা নিচ্ছেন। অনেকে আবার টাকা না দিয়েও চলে যান।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মুসলিম ঢালী সময়ের আলোকে জানান, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পোশাক নিতে আসেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর বিদেশি পোশাকের আমদানি কম হওয়ায় দেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। দেশীয় পোশাকের মান উন্নত হওয়ায় বিদেশি পোশাকের কদর কমেছে। এখন ব্যবসার মৌসুম চলছে। শবে বরাতের পর থেকে বেচা-বিক্রি শুরু হলেও এখন একটু কম। তবে ১৫ রমজানের পর থেকে বেচা-বিক্রি বাড়বে।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজি মো. স্বাধীন শেখ জানান, ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আনসার ও পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। পোশাকের দাম বৃদ্ধির কারণে অল্প লাভে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত পোশাক বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।


সময়ের আলো/আরএস/ 
























































































https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close