দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো ঢাকা শহরের রাস্তা। খানা খন্দ আর বড় বড় গর্তে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা সড়কটির। প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সড়ক ব্যবহারকারী হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের। এমনকি প্রায়ই ঘটে যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো ঘটনাও।
দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা ঢাকার অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরি সড়কের। ভূমি অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসে, সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। এছাড়া প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। সংস্কারের অভাবে সুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানিতে হাঁটু সমান ডুবে থাকে সড়কটি। বৃষ্টিতে সড়কটি আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় এখানকার মানুষের কাছে। তবে খুব শীঘ্রই টেন্ডার করে নতুনভাবে সড়কটি মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে এলজিইডি।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, শুরুতে সড়কটি কার্পেটিংয়ের পাকা সড়ক থাকলেও, পরে সংস্কার করে ইটের সলিং করা হয়। দুর্ভোগ সেখান থেকেই শুরু। অবৈধ ড্রাম ট্রাম ও ভারি যানবাহন চলা চলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। মটর সাইকেল, ইজিবাইক ও অন্য ছোট বড় যান বাহনগুলো চলছে হেলে দুলে। এলাকাবাসীর দাবি পাঁচ বছর ধরে সড়কের সংস্কার না হওয়ায় এই পথে চলা চলা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
স্কুল পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হলে এই একমাত্র সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। অতচ এই সড়কটি ব্যবহার করতে গিয়ে ড্রেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাটা চলা করা যায় না। পানির নিচে থাকা গর্তে রিকশার চাকা পড়ে রিকশা উল্টে যাচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলা চল করতে হচ্ছে সবাইকে।
রাজু আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, রিকশা যেতে চায় না এই সড়কে। আর গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে থাকে। এছাড়া মাসের পর মাস ড্রেনের ময়লা পানিতে ডুবে থাকে সড়কটি। এতে চলা চলে করতে সমস্যা হয় আমাদের।
ভূমি সেবা নিতে এসেছেন লোকমান আলী। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন ভূমি অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসে। কিন্তু সড়কে খানা খন্দ ও পানি থাকায় চরম দুর্ভোগে পরতে হয় সবাইকে। ভাঙ্গা সড়কের ঝাঁকুনি, আর বৃষ্টি ও সুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানির কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
মরিয়ম আক্তার নামে এক নারী বলেন, সড়কের ঝাঁকুনিতে গর্ভবতী নারী ও হার্টের রোগীদের বেহাল এই সড়কে চলা চল করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। পানি থাকার কারণে হেটেও চলাচল করা যাচ্ছে না।
দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে জনগণের ভোগান্তি লাগভের দাবি জানিয়ে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য সাথী আলী বলেন, শুনছি সড়কটি শীঘ্রই কাজ ধরবে। তবে সুয়ারেজ লাইনের পানি জমে সড়কটিতে চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে। এর আগেও আমি সুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করে পানি সরিয়ে দিয়েছি। সেই টাকা এখনো পাইনি। তবে পাবো একটু সময় লাগবে। এখন নতুন করে বরাদ্দ না থাকলে কিভাবে কাজ করবো?, আমিও চাই সড়কটি দ্রুত ঠিক হোক। আমার জনগণ যেনো পাকা সড়কে চলাচল করতে পারে।
শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সড়কটিতে দ্রুত এলজিইডি কাজ ধরবে। তবে সড়কের অবস্থা দেখার জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছি। আগামীকাল আমি নিজে যাবো। এরপর চলাচলের জন্য ববস্থা করে দিবো।
সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ সময়ের আলোকে জানান, সড়কটি নিয়ে দেড় বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে সড়কের ডিজাইন স্ট্রিমেট সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই টেন্ডার করে সড়কের কাজ শুরু করার কথাও জানান তিনি।
এদিকে এলজিইডির ডিজাইন অনুযায়ী ৪ কিলোমিটার ২০০ মিটার সড়কটির ১৩০০ মিটার আর.সিসি ঢালাই। এছাড়া বাকি অংশ কার্পেটিং ঢালাই এর পাশাপাশি ৩টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
সময়ের আলো/এএ/